প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
|
![]() |
পুস্তকের এক এক স্থান এমন দুর্বোধ যে, আমাদের সন্দেহ হয়, যে, হয় মূলের হস্ত-লিপিতে নয় ছাপিতে ছাপার ভুল হইয়া থাকিবে। একটা দৃষ্টান্ত দিই,
হরিণী জানয়ে ভাল কুটুম্ব বিবাদ,
তবহুঁ ব্যাধক গীত শুনিতে করু সাধ॥ সং ৮৬, পৃ. ৭৫
সম্পাদক ইহার টীকা দেওয়া আবশ্যক বিবেচনা করেন নাই। কিন্তু আমরা ইহার অর্থ খুঁজিয়া পাই না। ইহার ঠিক অর্থ এই—‘হরিণী কুটুম্ব-বিবাদ উত্তম রূপ জানে তথাপি ব্যাধের গান শুনিতে তাহার সাধ।’ এখানে ‘কুটুম্ব-বিবাদ’ কথাটার কেন ব্যবহার হইল, তাহা কি পাঠকেরা কিছু বুঝিতে পারিতেছেন? আমাদের বোধ হয় যে, উহা ‘কুটিল নিষাদ’ হইবে। অথবা কূট (অর্থাৎ ফাঁদ) শব্দজ একটা কিছু শব্দ ছিল, তাহাই ভ্রমক্রমে ‘কুটুম্ব’ শব্দে পরিণত হইয়াছে, এবং ‘বিবাদ’ শব্দ বোধ করি, ‘নিষাদ’ হইবে। আর-একটি অক্ষর-ভুলের উদাহরণ তুলিয়া দিই—
হরি যদি ফেরি পুছসি ধনি তোয়।
ইঙ্গিতে নিবেদন জানাওবি সোয়॥
যব চিতে দেখবি বড় অনুরাগ।
তৈখনে জানয়বি হৃদয়ে জনু লাগ॥ সং ৯১, পৃ. ৭৮
বিরহিণী রাধিকা কৃষ্ণের নিকট দূতী পাঠাইতেছেন। পাছে অপমান হইতে হয় এইজন্য প্রথমে ইঙ্গিতে কৃষ্ণের মনের ভাব বুঝিতে দূতীকে অনুরোধ করিতেছেন। রাধিকার ইচ্ছা, তাঁহার প্রতি কৃষ্ণের অনুরাগ লক্ষিত হইলে তবেই যেন মুখ ফুটিয়া সমস্ত নিবেদন করা হয়। সমস্ত গীতটির এই ভাব। উপরি-উদ্ধৃত শ্লোকের চতুর্থ চরণটি বুঝা যায় না। কিন্তু ‘জানয়বি’ শব্দ যদি ‘জানাওবি’ হয় তবে এইরূপ অর্থ হয়—যখনি চিত্তে বড়ো অনুরাগ দেখিবি, তখনি জানাবি; হৃদয়ে যাহাতে লাগে। অর্থাৎ সেই সময় জানাইলেই হৃদয়ে লাগিবে।
রাধিকা ছল করিয়া সখীদের কহিতেছেন—কাল ঘুমাইয়াছিলাম, এমন সময় এক পুরুষ আসিলেন, তাঁহার অরুণ আঁখি ও লোহিত অধর দেখিয়া ভয়ে আমার কেশপাশ বিশৃঙ্খল হইয়া গেল, কপালে কাজল ও মুখে সিন্দুর লাগিল।
এক পুরুখ পুন আওল আগে।
কোপে অরুণ আঁখি অধরক রাগে॥
সে ভয়ে চিকুর চির (চীর?) আনহি গেল।
কপালে কাজর মুখে সিন্দুর ভেল। সং ১০৯, পৃ. ৯৩
সম্পাদক টীকা করিতেছেন ‘সেই ভয়ে চিকুর (বিদ্যুৎ) চির (দীর্ঘকালের জন্য) অন্যত্র গমন করিল।’ এ টীকার কি কোনো অর্থ আছে? কোনো কথা নাই, বার্তা নাই, এমন সময় সহসা বিনামেঘে একটা বিদ্যুৎ খেলাইয়া যাইবে কেন, আমরা ভাবিয়া পাই না। চিকুর অর্থে কেশ। রাধিকা বলিতেছেন, সেই পুরুষের ভয়ে তাঁহার চিকুর ও চীর অন্যত্র গেল; এবং বেশভূষার বিপর্যয় হইল।
হিম হিমকর-কর তাপে তাপায়লু
ভৈগেল কাল বসন্ত।
কান্ত কাক মুখে নাহি সম্বাদই
কিয়ে করু মদন দুরন্ত। সং ১২৮, পৃ. ২০৬
শীতল চন্দ্রের কিরণও আমাকে তাপিত করিল, বসন্ত আমার কাল হইল। কান্ত কাহারো মুখে সংবাদ লইলেন না, দুরন্ত মদন