অনুবাদ-চর্চা
পর্বে দলে দলে শত্রুকীটের আক্রমণ-ভাজন হইয়া থাকে; ইহারা বাধা না পাইলে শীঘ্রই গাছগুলিকে সম্পূর্ণ নষ্ট করিত।’

‘What the loss our forest and shade trees would mean to us can better be imagined than described.’ পত্রলেখকের তরজমা ‘বন্য ও ছায়াপাদপের ক্ষতি বলিতে কতটা ক্ষতি আমাদের বোধগম্য হয় তাহা বর্ণনা করা অপেক্ষা আমাদের অধিক উপলব্ধির বিষয়।’

‘বর্ণনা করা অপেক্ষা অধিক উপলব্ধির বিষয়’ এরূপ প্রয়োগ চলে না। একটা কিছু ‘করার’ সঙ্গে আর-একটা কিছু ‘করার’ তুলনা চাই। ‘বর্ণনা করা অপেক্ষা উপলব্ধি করা সহজ’ বলিলে ভাষায় বাধিত না বটে কিন্তু উপলব্ধি করা এবং imagine করা এক নহে।

আমাদের তরজমা: ‘আমাদের বন-বৃক্ষ এবং ছায়াতরুগুলির বিনাশ বলিতে যে কতটা বুঝায় তাহা বর্ণনা করা অপেক্ষা কল্পনা করা সহজ।’

‘Wood enters into so many products, that it is difficult to think of civilised man without it, while the fruits of the orchards are of the greatest importance.’

পত্রলেখকের তরজমা : ‘কাষ্ঠ হইতে এত দ্রব্য উৎপন্ন হয় যে, সভ্য মানবের পক্ষে উহাকে পরিহার করিবার চিন্তা অত্যন্ত কঠিন, এদিকে আমাদের উদ্যানজাত ফলসমূহও সর্বাপেক্ষা প্রয়োজনীয়।’

কাষ্ঠ হইতে দ্রব্য নির্মিত হয়, উৎপন্ন হয় না। এখানে ‘উহাকে’ শব্দের ‘কে’ বিভক্তিচিহ্ন চলিতে পারে না। ‘ফল সমূহ সর্বাপেক্ষা প্রয়োজনীয়’ বলিলে অত্যুক্তি করা হয়। ইংরেজিতে ‘are of the greatest importance’ বলিতে এই বুঝায় যে পৃথিবীতে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়তা যে-সকল জিনিসের আছে, ফলও তাহার মধ্যে একটি। ‘সভ্য মানুষের পক্ষে উহাকে পরিহার করিবার চিন্তা অত্যন্ত কঠিন’ ইহা মূলের অনুগত হয় নাই।

আমাদের তরজমা: ‘কাঠ আমাদের এতপ্রকার সামগ্রীতে লাগে যে ইহাকে বাদ দিয়া সভ্য মানুষের অবস্থা চিন্তা করা কঠিন; এদিকে ফলবাগানের ফলও আমাদের যার-পর-নাই প্রয়োজনীয়।’

বলা বাহুল্য ‘যার-পর-নাই’ কথাটা শুনিতে যত একান্ত বড়ো, ব্যবহারে ইহার অর্থ তত বড়ো নহে।

‘Fortunately, the insect foes of trees are not without their own persistent enemies, and among them are many species of brids, whose equipment and habits specially fit them to deal with insects and whose entire lives are spent in pursuit of them.’

পত্রলেখকের তরজমা : ‘সৌভাগ্যক্রমে বৃক্ষের কীট-অরিগণও নিজেরা তাহাদের স্থায়ী শত্রুহস্ত হইতে মুক্ত নয়, এবং তাহাদের মধ্যে নানাজাতীয় পক্ষী আছে, যাহাদিগকে তাহাদের অভ্যাস ও দৈহিক উপকরণগুলি বিশেষভাবে কীটদিগের সহিত সংগ্রামে উপযোগী করিয়াছে এবং যাহাদিগের সমস্ত জীবন তাহাদিগকে অনুধাবন করিতে ব্যয়িত হয়।’

‘যে’ সর্বনাম শব্দের প্রয়োগ সম্বন্ধে পূর্বেই আমাদের বক্তব্য জানাইয়াছি।

আমাদের তরজমা : ‘ভাগ্যক্রমে বৃক্ষের শত্রু-কীট-সকলেরও নিজেদের নিত্যশত্রুর অভাব নাই; এই শত্রুদের মধ্যে এমন অনেক জাতীয় পাখি আছে যাহাদের যুদ্ধোপকরণ এবং অভ্যাস সকল কীট-আক্রমণের পক্ষে বিশেষ উপযোগী এবং যাহারা কীট শিকারেই সমস্ত জীবন যাপন করে।’

ইংরেজিতে persistent কথাটি নিতান্ত সহজ। কথ্য বাংলায় আমরা বলি নাছোড়বান্দা। কিন্তু লেখায় সব জায়গায় ইহা চলে না। আমাদের একজন পত্রলেখক ‘দৃঢ়াগ্রহ’ শব্দ ব্যবহার করিয়াছেন। কিন্তু ‘আগ্রহ’ শব্দে, অন্তত বাংলায়, প্রধানত একটি মনোধর্ম