অরূপরতন
কে আসছে কে যাচ্ছে তার কোনো ঠিক-ঠিকানাই নেই – রাম রাম।

ভদ্রসেন। সেও তো ওই মাধবের পরামর্শ শুনেই এসেছি। আমাদের গুষ্টিতে এমন কখনো হয় নি। আমার বাবাকে তো জান– কতবড়ো মহাত্মা লোক ছিল– শাস্ত্রমতে ঠিক উনপঞ্চাশ হাত মেপে গণ্ডি কেটে তার মধ্যেই সমস্ত জীবনটা কাটিয়ে দিলে – একদিনের জন্যে তার বাইরে পা ফেলে নি। মৃত্যুর পর কথা উঠল ওই উনপঞ্চাশ হাতের মধ্যেই তো দাহ করতে হয় – সে এক বিষম মুশকিল – শেষকালে শাস্ত্রী বিধান দিলে উনপঞ্চাশে যে দুটো অঙ্ক আছে তার বাইরে যাবার জো নেই; অতএব ওই চার নয় উনপঞ্চাশকে উলটে নিয়ে নয় চার চুরানব্বই করে দাও – তবেই তো তাকে বাড়ির বাইরে পোড়াতে পারি, নইলে ঘরেই দাহ করতে হত। বাবা, এত আঁটাআঁটি! এ কি যে-সে দেশ পেয়েছ!

বিরাজদত্ত। বটেই তো, মরতে গেলেও ভাবতে হবে এ কি কম কথা।

ভদ্রসেন। সেই দেশের মাটিতে শরীর, তবু মাধব বলে কিনা, খোলা রাস্তাই ভালো।

[ সকলের প্রস্থান


সদলে ঠাকুরদার প্রবেশ

ঠাকুরদা। ওরে দক্ষিনে হাওয়ার সঙ্গে সমান পাল্লা দিতে হবে — হার মানলে চলবে না — আজ সব রাস্তাই গানে ভাসিয়ে দিয়ে চলব।


মেয়ের দলের প্রবেশ

প্রথমা। ঠাকুরদা, একটা কথা জিজ্ঞাসা করি, উৎসবটা হচ্ছে কোথায়?

ঠাকুরদা। যেদিক চাইবে সেইদিকেই।

প্রথমা। একেই বলে তোমাদের রাজাধিরাজের উৎসব!

ঠাকুরদা। আমরা তো তাই বলি।

দ্বিতীয়া। আমাদের দেশের সব চেয়ে খুদে সামন্তরাজও এর চেয়ে ঘটা করে পথে বেরোয়।

ঠাকুরদা। নিজেকে না চেনাতে পারলে তারা যে বঞ্চিত।

তৃতীয়া। আর তোমরা যে কোন্‌ না-দেখা রাজার কথা বলছ?

ঠাকুরদা। তাঁকে না চিনতে পারলে আমরাই বঞ্চিত।

প্রথমা। চেনবার উপায়টা কী করেছ?

ঠাকুরদা। তাঁর সঙ্গে সুর মেলাচ্ছি। এই যে দখিন হাওয়া দিয়েছে, আমের বোল ধরেছে, সমান সুরে সাড়া দিতে পারলে ভিতরে ভিতরে জানাজানি হয়।

দ্বিতীয়া। তোমাদের কর্তারা ঢাকঢোলের বায়না দেন নি বুঝি? তোমাদের উপরেই সব বরাত?

ঠাকুরদা। তা নয় তো কী। ভাড়া করে সমারোহ? তোমরা আমরা আছি কী করতে? ওরে তোরা ধর-না ভাই গান।


গান

আজি     দখিন দুয়ার খোলা—
          এসো হে, এসো হে, এসো হে, আমার
               বসন্ত এসো।
দিব      হৃদয়-দোলায় দোলা,