টা টো টে

একটা, দুটো, তিনটে। টা, টো, টে। একই বিভক্তির এরূপ তিন প্রকার ভেদ কেন হয়, এই প্রশ্ন সহজেই মনে উদয় হইয়া থাকে।

আমাদের বাংলা-শব্দে যে-সকল উচ্চারণবৈষম্য আছে, মনোনিবেশ করিলে তাহার একটা-না-একটা নিয়ম পাওয়া যায়, এ কথা আমি পূর্বেই নির্দেশ করিয়াছি। আমি দেখাইয়াছি বাংলায় আদ্যক্ষরবর্তী অ স্বরবর্ণ কখনো কখনো বিকৃত হইয়া ‘ও’ হইয়া যায়; যেমন, কলু (কোলু) কলি (কোলি) ইত্যাদি; স্বরবর্ণ এ বিকৃত হইয়া অ্যা হইয়া যায়; যেমন, খেলা (খ্যালা) দেখা (দ্যাখা) ইত্যাদি। কিন্তু এইরূপ পরিবর্তন গুটিকতক নিয়মের অনুবর্তী।

আমরা পূর্বেই দেখিয়াছি ই এবং উ স্বরবর্ণ বাংলার বহুসংখ্যক উচ্চারণবিকারের মূলীভূত কারণ; উপস্থিত প্রসঙ্গেও তাহার প্রমাণ পাওয়া যায়।

উদাহরণ। ‘সে’ অথবা ‘এ’ শব্দের পরে টা বিভক্তি অবিকৃত থাকে; যেমন, সেটা এটা। কিন্তু ‘সেই’ অথবা ‘এই’ শব্দের পরে টা বিভক্তির বিকার জন্মে; যেমন, এইটে সেইটে।

অতএব দেখা গেল ইকারের পর টা টে হইয়া যায়। কিন্তু কেবলমাত্র টা বিভক্তির মধ্যে এই নিয়মকে সীমাবদ্ধ করিলে সংগত হয় না। ইকারের পরবর্তী আকারমাত্রের প্রতিই এই নিয়মপ্রয়োগ করিয়া দেখা কর্তব্য।

হইয়া–হয়ে হিসাব–হিসেব
লইয়া–লয়ে মাহিনা–মাইনে
পিঠা–পিঠে ভিক্ষা–ভিক্ষে
চিঁড়া–চিঁড়ে শিক্ষা–শিক্ষে
শিকা–শিকে নিন্দা–নিন্দে
বিলাত–বিলেত বিনা–বিনে

এমন-কি, যেখানে অপভ্রংশে মূলশব্দের ইকার লুপ্ত হইয়া যায়, সেখানেও এ নিয়ম খাটে। যেমন :

করিয়া–ক’রে
মরিচা–মর্চে
সরিষা–সর্ষে

আ এবং ই মিলিত হইয়া যুক্তস্বর ‘ঐ’ হয়। এজন্য ‘ঐ’ স্বরের পরেও আ স্বরবর্ণ এ হইয়া যায়; যেমন :

কৈলাস–কৈলেস
তৈয়ার–তোয়ের

ক্ত কেবল ইহাই নহে। যফলার সহিত সংযুক্ত আকারও একারে পরিণত হয়। কারণ, যফলা ই এবং অ-এর যুক্তস্বর; যথা :

অভ্যাস–অভ্যেস
কন্যা–কন্যে
বন্যা–বন্যে