প্রজাপতির নির্বন্ধ

শ্রীশ। ওর মধ্যে কিন্তুটা কোথায় রসিকবাবু, আপনি অত চিন্তিত হচ্ছেন কেন?

রসিক। বলেন কী শ্রীশবাবু, আপনাদের আমি কথা দিয়েছি যখন–

বিপিন। তা বেশ তো, এমনই কি মহাবিপদে ফেলেছেন!

শ্রীশ। মা আমাদের যে আশীর্বাদ করে গেলেন আমরা যেন তার যোগ্য হই।

রসিক। না না, শ্রীশবাবু, সে কোনো কাজের কথা নয়। আপনারা যে দায়ে পড়ে ভদ্রতার খাতিরে–

বিপিন। রসিকবাবু, আপনি আমাদের প্রতি অবিচার করবেন না– দায়ে পড়ে–

রসিক। দায় নয় তো কী মশায়! সে কিছুতেই হবে না। আমি বরঞ্চ সেই ছেলে দুটোকে বনমালীর হাত ছাড়িয়ে কুমারটুলি থেকে এখনো ফিরিয়ে আনব, তবু–

শ্রীশ। আপনার কাছে কী অপরাধ করেছি রসিকবাবু?

রসিক। না না, এ তো অপরাধের কথা হচ্ছে না। আপনারা ভদ্রলোক, কৌমার্যব্রত অবলম্বন করেছেন, আমার অনুরোধে পড়ে পরের উপকার করতে এসে শেষকালে–

বিপিন। শেষকালে নিজের উপকার করে ফেলব এটুকু আপনি সহ্য করতে পারবেন না– এমনি হিতৈষী বন্ধু!

শ্রীশ। আমরা যেটাকে সৌভাগ্য বলে স্বীকার করছি আপনি তার থেকে আমাদের বঞ্চিত করতে চেষ্টা করছেন কেন?

রসিক। শেষকালে আমাদের দোষ দেবেন না।

বিপিন। নিশ্চয় দেব, যদি না আপনি স্থির হয়ে শুভকর্মে সহায়তা করেন।

রসিক। আমি এখনো সাবধান করছি–
                        গতং তদ্‌গাম্ভীর্যং তটমপি চিতং জালিকশতৈঃ।
                        সখে হংসোত্তিষ্ঠ, ত্বরিতমমুতো গচ্ছ সরসঃ॥
                                        ----
                সে গাম্ভীর্য গেল কোথা,                 নদীতটে হেরো হোথা
                                জালিকেরা জালে ফেলে ঘিরে–
                সখে হংস, ওঠো ওঠো,                সময় থাকিতে ছোটো
                                হেথা হতে মানসের তীরে।

শ্রীশ। কিছুতেই না। তা, আপনার সংস্কৃত শ্লোক ছুঁড়ে মারলেও সখা হংসরা কিছুতেই এখান থেকে নড়ছেন না।

রসিক। স্থান খারাপ বটে। নড়বার জো নেই। আমি তো অচল হয়ে বসে আছি, হায় হায়–
                                অয়ি কুরঙ্গ তপোবনবিভ্রমাৎ
                                উপগতাসি কিরাতপুরীমিমাম্‌।

ভৃত্যের প্রবেশ

ভৃত্য। চন্দ্রবাবু এসেছেন।

অক্ষয়। এইখানেই ডেকে নিয়ে আয়।

[ভৃত্যের প্রস্থান]