প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
২। চেয়ে দেখ্, ভাই, তোদের সুধাংশু কী খাটুনিই খাটছে। নিজের খরচে ফুল কিনে এনে টেবিল সাজিয়েছে নিজের হাতে। কাল এক কাণ্ড বাধিয়েছিল। নেপু বিশ্বাস মুখ বাঁকিয়ে বলেছিল, সুষমা টাকার লোভে এক বুনো রাজাকে বিয়ে করছে।
১। নেপু বিশ্বেস! ওর মুখ বাঁকবে না? বুকের মধ্যে যে ধনুষ্টংকার! আজকাল সুষমাকে নিয়ে ছেলেদের দলে বুক-জ্বলুনির লঙ্কাকাণ্ড। ঐ সুধাংশুর বুকখানা যেন মানোয়ারি জাহাজের বয়লারঘরের মতো হয়ে উঠেছে।
২। সুধাংশুর তেজ আছে, যেমন শোনা নেপুর কথা অমনি তাকে পেড়ে ফেললে মাটিতে, বুকের উপর চেপে বসে বললে, মাপ চেয়ে চিঠি লিখতে হবে।
১। দারুণ গোঁয়ার, ওর ভয়ে পেট ভরে কেউ নিন্দে করতেও পারে না। বাঙালির ছেলেদের বিষম কষ্ট।
২। জানিস নে, আমাদের পাড়ায় বসেছে হতাশের সমিতি? লোকে যাদের বলে সুষমাভক্ত সম্প্রদায়, সৌষমিক যাদের উপাধি, তারা নাম নিয়েছে লক্ষ্মীছাড়ার দল। নিশেন বানিয়েছে, তাতে ভাঙাকুলোর চিহ্ন। সন্ধ্যাবেলায় কী চেঁচামেচি। পাড়ায় গেরস্তরা বলছে কাউন্সিলে প্রস্তাব তুলবে, আইন করে ধরে ধরে অবিলম্বে সব ক’টায় জীবন্ত সমাধি, অর্থাৎ বিয়ে দেওয়া চাই। নইলে রাত্তিরে ভদ্রলোকদের ঘুম বন্ধ। পাবলিক-ন্যুসেন্স্ যাকে বলে।
১। এই লোকহিতকর কার্যে তুই সাহায্য করতে পারবি, প্রিয়।
২। দয়াময়ী, লোকহিতৈষিতা তোমারও কোনো মেয়ের চেয়ে কম নয়, ভাই। লক্ষ্মীছাড়ার ঘরে লক্ষ্মী স্থাপন করবার শখ আছে তোমার। আন্দাজে তা বুঝতে পারি। অনু, ঐ লোকটাকে চিনিস?
১। কখনো তো দেখি নি।
২। ক্ষিতিশবাবু। গল্প লেখে, খুব নাম। বাঁশরি দামী জিনিসের বাজারদর বোঝে। ঠাট্টা করলে বলে- ঘোলের সাধ দুধে মেটাচ্ছি, মুক্তার বদলে শুক্তি।
১। চল্, ভাই, সবাই এসে পড়ল। আমাদের একত্র দেখলে ঠাট্টা করবে।
বাগানের কোণে তিনটে ঝাউগাছ চক্র করে দাঁড়িয়ে। তলায় কাঠের আসন। সেই নিভৃতে ক্ষিতিশ। অন্যত্র নিমন্ত্রিতের দল কেউ-বা আলাপ করছে বাগানে বেড়াতে বেড়াতে, কেউ-বা খেলছে টেনিস, কেউ-বা টেবিলে সাজানো আহার্য ভোগ করছে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে।
শচীন। আই সে, তারক, লোকটা আমাদের এলাকায় পিলপেগাড়ি করেছে, এর পরে পার্মনেণ্ট্ টেন্যুরের দাবি করবে। উচ্ছেদ করতে ফৌজদারি।
তারক। কার কথা বলছ।
শচীন। ঐ-যে নববার্তা কাগজের গল্পলিখিয়ে ক্ষিতিশ।
তারক। ওর লেখা একটাও পড়ি নি, সেইজন্যে অসীম শ্রদ্ধা করি।
শচীন। পড় নি ওর নূতন বই ‘বেমানান’? বিলিতিমার্কা নব্যবাঙালিকে মুচড়ে মুচড়ে নিংড়েছে।
অরুণ। দূরে বসে কলম চালিয়েছে, ভয় ছিল না মনে। কাছে এসেছে এইবারে বুঝবে, নিংড়ে ধব্ধবে সাদা করতে পারি