বাঁশরি

বাঁশরি। ব্যস্ত হও কেন। ঐ কালির দাগেই তোমার অসাধারণতা। তুমি রিয়ালিস্ট, নির্মলতা তোমাকে মানায় না। তুমি মসীধ্বজ। ঐ আসছে অনসূয়া প্রিয়ম্বদা।

ক্ষিতিশ। তার মানে?

বাঁশরি। দুই সখী। ছাড়াছাড়ি হবার জো নেই। বন্ধুত্বের উপাধি-পরীক্ষায় ঐ নাম পেয়েছে, আসল নামটা ভুলেছে সবাই।

[ উভয়ের প্রস্থান
দুই সখীর প্রবেশ

১। আজ সুষমার এন্‌‍গেজ্‌‍মেণ্ট, মনে করতে কেমন লাগে।

২। সব মেয়েরই এন্‌‍গেজ্‌‍মেণ্টে মন খারাপ হয়ে যায়।

১। কেন?

২। মনে হয়, দড়ির উপরে চলছে, থর‌্থর্ করে কাঁপছে সুখদুঃখের মাঝখানে। মুখের দিকে তাকিয়ে কেমন ভয় করে।

১। তা সত্যি। আজ মনে হচ্ছে যেন নাটকের প্রথম অঙ্কের ড্রপ্‌সীন উঠল। নায়কনায়িকাও তেমনি, নাট্যকার নিজের হাতে সাজিয়ে চালান করেছেন রঙ্গভূমিতে। রাজা সোমশংকরকে দেখলে মনে হয়, টডের রাজস্থান থেকে বেরিয়ে এল দুশো-তিনশো বছর পেরিয়ে।

২। দেখিস নি, প্রথম যখন এলেন রাজাবাহাদুর! খাঁটি মধ্যযুগের; ঝাঁকড়া চুল, কানে বীরবৌলি, হাতে মোটা কঙ্কণ, কপালে চন্দনের তিলক, বাংলা কথা খুব বাঁকা। পড়লেন বাঁশরির হাতে, হল ওঁর মডার্‌ন্‌ সংস্করণ। দেখতে দেখতে যে-রকম রূপান্তর ঘটল কারও সন্দেহ ছিল না ওঁর গোত্রান্তর ঘটবে বাঁশরির গুষ্টিতেই। বাপ প্রভুশংকর খবর পেয়েই তাড়াতাড়ি আধুনিকের কবল থেকে নিয়ে গেলেন সরিয়ে।

১। বাঁশরির চেয়ে বড়ো ওস্তাদ ঐ পুরন্দরসন্ন্যাসী, সব-ক’টা বেড়া ডিঙিয়ে রাজার ছেলেকে টেনে নিয়ে এলেন এই ব্রাহ্মসমাজের আংটি-বদলের সভায়। সব চেয়ে কঠিন বেড়া স্বয়ং বাঁশরির।

সুষমার বিধবা মা বিভাসিনীর প্রবেশ

স্বল্পজলা বৈশাখী নদীর স্রোতঃপথে মাঝে মাঝে চর প’ড়ে যেরকম দৃশ্য হয় তেমনি চেহারা। শিথিলবিস্তারিত দেহ, কিছু মাংসবহুল, তবু চাপা পড়ে নি যৌবনের ধারাবশেষ।

বিভাসিনী। বসে বসে কী ফিস্‌ ফিস্‌ করছিস তোরা।

১। মাসি, লোকজন আসবার সময় হল, সুষমার দেখা নেই কেন।

বিভাসিনী। কী জানি, হয়তো সাজগোজ চলছে। তোরা চল্‌, বাছা, চায়ের টেবিলের কাছে, অতিথিদের খাওয়াতে হবে।

১। যাচ্ছি, মাসি, ওখানে এখনও রোদ্‌দুর।

বিভাসিনী। যাই, দেখি গে সুষমা কী করছে। তাকে এখানে তোরা কেউ দেখিস নি?

২। না, মাসি।

বিভাসিনী। কে যে বললে ঐ পুকুরটার ধারে এসেছিল?

১। না, এতক্ষণ আমরাই ওখানে বেড়াচ্ছিলুম।

[ বিভাসিনীর প্রস্থান