প্রজাপতির নির্বন্ধ
আলোকিত। (আপন-মনে)–
                                নিশি না পোহাতে জীবনপ্রদীপ
                                    জ্বালাইয়া যাও প্রিয়া!

শ্রীশ। পূর্ণবাবু, যাও কোথায়!

পূর্ণ। চন্দ্রবাবুর বাসায় একখানা বই ফেলে এসেছি, সেইটে খুঁজতে যাচ্ছি।

বিপিন। খুঁজলে পাবে তো? চন্দ্রবাবুর বাসা বড়ো এলোমেলো জায়গা– সেখানে যা হারায় সে আর পাওয়া যায় না।

[পূর্ণের প্রস্থান]

শ্রীশ। (দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া) পূর্ণ বেশ আছে ভাই বিপিন!

বিপিন। ভিতরকার বাষ্পের চাপে ওর মাথাটা সোডাওয়াটারের ছিপির মতো একেবারে টপ্‌ করে উড়ে না যায়!

শ্রীশ। যায় তো যাক-না। কোনোমতে লোহার তার এঁটে মাথাটাকে ঠিক জায়গায় ধরে রাখাই কি জীবনের চরম পুরুষার্থ? মাঝে মাঝে মাথার বেঠিক না হলে রাতদিন মুটের বোঝার মতো মাথাটাকে বয়ে বেড়াচ্ছি কেন? দাও ভাই, তার কেটে, একবার উড়ুক।– সেদিন তোমাকে শোনাচ্ছিলুম–
                                ওরে সাবধানী পথিক, বারেক
                                    পথ ভুলে মর্ ফিরে।
                                খোলা আঁখি দুটো অন্ধ করে দে
                                    আকুল আঁখির নীরে।
                                সে ভোলা পথের প্রান্তে রয়েছে
                                    হারানো হিয়ার কুঞ্জ,
                                ঝরে পড়ে আছে কাঁটাতরুতলে
                                      রক্তকুসুমপুঞ্জ–
                                সেথা দুই বেলা ভাঙা-গড়া খেলা
                                      অকূলসিন্ধুতীরে।
                                ওরে সাবধানী পথিক, বারেক
                                    পথ ভুলে মর্ ফিরে।

বিপিন। আজকাল তুমি খুব কবিতা পড়তে আরম্ভ করেছ, শীঘ্রই একটা মুশকিলে পড়বে দেখছি!

শ্রীশ। যে লোক ইচ্ছে করে মুশকিলের রাস্তা খুঁজে বেড়াচ্ছে তার জন্যে কেউ ভেবো না। মুশকিলকে এড়িয়ে চলতে গিয়ে হঠাৎ মুশকিলের মধ্যে পা ফেললেই বিপদ।– আসুন আসুন রসিকবাবু, রাত্রে পথে বেরিয়েছেন যে?

রসিকের প্রবেশ

রসিক। আমার রাতই বা কী, আর দিনই বা কী!
                                বরমসৌ দিবসো ন পুনর্নিশা
                                ননু নিশৈব বরং ন পুনর্দিনম্‌।