প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
শ্রীশ। সে লাবণ্য দৈবাৎ কখনো দেখেছেন রসিকবাবু?
রসিক। দেখেছি বৈকি, নইলে কি ঐ রুমালখানার জন্যে এত লড়াই করি? আর ঐ যে ‘ন’ অক্ষরের কথাগুলো আমার মাথার মধ্যে এখনো এক ঝাঁক ভ্রমরের মতো গুঞ্জন করে বেড়াচ্ছে তাদের সামনে কি একটি কমলবনবিহারিণী মানসীমূর্তি নেই?
শ্রীশ। রসিকবাবু, আপনার ঐ মগজটি একটি মৌচাকবিশেষ, ওর ফুকরে ফুকরে কবিত্বের মধু– আমাকে সুদ্ধ মাতাল করে দেবেন দেখছি।
শৈল। আমার আসতে অনেক দেরি হয়ে গেল, মাপ করবেন শ্রীশবাবু!
শ্রীশ। আমি এই সন্ধেবেলায় উৎপাত করতে এলুম, আমাকেও মাপ করবেন অবলাকান্তবাবু!
শৈল। রোজ সন্ধেবেলায় যদি এইরকম উৎপাত করেন তা হলে মাপ করব, নইলে নয়।
শ্রীশ। আচ্ছা রাজি, কিন্তু এর পরে যখন অনুতাপ উপস্থিত হবে তখন প্রতিজ্ঞা স্মরণ করবেন।
শৈল। আমার জন্যে ভাববেন না, কিন্তু আপনার যদি অনুতাপ উপস্থিত হয় তা হলে আপনাকে নিষ্কৃতি দেব।
শ্রীশ। সেই ভরসায় যদি থাকেন তা হলে অনন্তকাল অপেক্ষা করতে হবে।
শৈল। রসিকদাদা, তুমি শ্রীশবাবুর পকেটের দিকে হাত বাড়াচ্ছ কেন? বুড়োবয়সে গাঁটকাটা ব্যাবসা ধরবে না কি?
রসিক। না ভাই, সে ব্যাবসা তোদের বয়সেই শোভা পায়। একখানা রুমাল নিয়ে শ্রীশবাবুতে আমাতে তক্রার চলছে, তোকে তার মীমাংসা করে দিতে হবে।
শৈল। কিরকম?
রসিক। প্রেমের বাজারে বড়ো মহাজনি করবার মূলধন আমার নেই, আমি খুচরো মালের কারবারী– রুমালটা, চুলের দড়িটা, ছেঁড়া কাগজে দু-চারটে হাতের অক্ষর, এই-সমস্ত কুড়িয়ে-বাড়িয়েই আমাকে সন্তুষ্ট থাকতে হয়। শ্রীশবাবুর যেরকম মূলধন আছে তাতে উনি বাজারসুদ্ধ পাইকেরি দরে কিনে নিতে পারেন, রুমাল কেন সমস্ত নীলাঞ্চলে অর্ধেক ভাগ বসাতে পারেন; আমরা যেখানে চুলের দড়ি গলায় জড়িয়ে মরতে ইচ্ছে করি উনি যে সেখানে আগুল্ফবিলম্বিত চিকুররাশির সুগন্ধ ঘনান্ধকারের মধ্যে সম্পূর্ণ অস্ত যেতে পারেন। উনি উঞ্ছবৃত্তি করতে আসেন কেন?