প্রজাপতির নির্বন্ধ
                        কালিন্দীকমলগন্ধ ছুটিবে সুন্দর।
                        লীনা রবে মদিরাক্ষী তব অঙ্কতলে,
                        বহিবে বাসন্তীবাস ব্যাকুল কুন্তলে।
                        তাঁহারে করিব সেবা, কবে হবে হায়–
                        কিসলয়-পাখাখানি দোলাইব গায়?

শ্রীশ। বা, বা, রসিকবাবু, আপনার মধ্যে এত আছে তা তো জানতুম না।

রসিক। কী করে জানবেন বলুন। কাব্যলক্ষ্মী যে তাঁর পদ্মবন থেকে মাঝে মাঝে এই টাকের উপরে খোলা হাওয়া খেতে আসেন এ কেউ সন্দেহ করে না। (হাত বুলাইয়া) কিন্তু এমন ফাঁকা জায়গা আর নেই!

শ্রীশ। আহাহা রসিকবাবু, যমুনাতীরে সেই স্নিগ্ধ অলিন্দওয়ালা কুঞ্জকুটিরটি আমার ভারি মনে লেগে গেছে। যদি পায়োনিয়রে বিজ্ঞাপন দেখি সেটা দেনার দায়ে নিলেমে বিক্রি হচ্ছে তা হলে কিনে ফেলি।

রসিক। বলেন কী শ্রীশবাবু! শুধু অলিন্দ নিয়ে করবেন কী? সেই মদমুকুলিতাক্ষীর কথাটা ভেবে দেখবেন। সে নিলেমে পাওয়া শক্ত।

শ্রীশ। কার রুমাল এখানে পড়ে রয়েছে।

রসিক। দেখি দেখি! তাই তো! দুর্লভ জিনিস আপনার হাতে ঠেকে দেখছি! বাঃ, দিব্যি গন্ধ? শ্লোকের লাইনটা বদলাতে হবে মশায়, ছন্দোভঙ্গ হয় হোক গে– বাসন্তীনবপরিমলোদ্‌গাররুমালাং! শ্রীশবাবু, এ রুমালটাতে তো আমাদের কুমারসভার পতাকা-নির্মাণ চলবে না। দেখেছেন, কোণে একটি ছোট্ট ‘ন’ অক্ষর লেখা রয়েছে?

শ্রীশ। কী নাম হতে পারে বলুন দেখি? নলিনী? না, বড্ড চলিত নাম। নীলাম্বুজা? ভয়ংকর মোটা। নীহারিকা? বড়ো বাড়াবাড়ি। বলুন-না রসিকবাবু, আপনার কী মনে হয়?

রসিক। নাম মনে হয় না মশায়, আমার ভাব মনে আসে। অভিধানে যত ‘ন’ আছে সমস্ত মাথার মধ্যে রাশীকৃত হয়ে উঠতে চাচ্ছে, ‘ন’য়ের মালা গেঁথে একটি নীলোৎপলনয়নার গলায় পরিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে– নির্মলনবনীনিন্দিতনবীন– বলুন-না শ্রীশবাবু– শেষ করে দিন-না–

শ্রীশ। নবমল্লিকা।

রসিক। বেশ বেশ—নির্মলনবনীনিন্দিতনবীননবমল্লিকা! গীতগোবিন্দ মাটি হল। আরো অনেকগুলো ভালো ভালো ‘ন’ মাথার মধ্যে হাহাকার করে বেড়াচ্ছে, মিলিয়ে দিতে পারছি নে– নিভৃত নিকুঞ্জনিলয়, নিপুণনূপুরনিক্কণ, নিবিড়নীরদনির্মুক্ত– অক্ষয়দাদা থাকলে ভাবতে হত না। মাস্টারমশায়কে দেখবামাত্র ছেলেগুলো যেমন বেঞ্চে নিজ নিজ স্থানে সার বেঁধে বসে– তেমনি অক্ষয়দাদার সাড়া পাবামাত্র কথাগুলো দৌড়ে এসে জুড়ে দাঁড়ায়।– শ্রীশবাবু, বুড়োমানুষকে বঞ্চনা করে রুমালখানা চুপিচুপি পকেটে পুরবেন না–

শ্রীশ। আবিষ্কারকর্তার অধিকার সকলের উপর–

রসিক। আমার ঐ রুমালখানিতে একটু প্রয়োজন আছে শ্রীশবাবু! আপনাকে তো বলেছি, আমার নির্জন ঘরের একটিমাত্র জানলা দিয়ে একটুমাত্র চাঁদের আলো আসে– আমার একটি কবিতা মনে পড়ে–
                                বীথীষু বীথীষু বিলাসিনীনাং
                                মুখানি সংবীক্ষ্য শুচিস্মিতানি