বাঁশরি
সুধাংশুর সঙ্গে একদল লোকের প্রবেশ
অলক্ষুণের দল, সকালবেলায় মুখ দেখলুম, উননের উপর হাঁড়ির তলা যাবে ফেটে।

সুধাংশু। মিস্‌ শৈল, ভীরু তোমার আশ্রয় নিয়েছে, কিন্তু আজ ছাড়ছি নে।

সতীশ। ভয় দেখাও কেন। চাও কী।

শচীন। চাই লক্ষ্মীছাড়া ক্লাবের চাঁদা। প্রথম দিন থেকেই বাকি।

সতীশ। কী। আমি তোমাদের দলে! ভিগরস্ প্রোটেস্ট জানাচ্ছি, বলবান অস্বীকৃতি।

নরেন। দলিল দেখাও।

সতীশ। আমার দলিল এই সামনে সশরীরে।

সুধাংশু। শৈলদেবী, এই বুঝি! বে-আইনি প্রশ্রয় দেন পলাতকাকে।

শৈল। কিছু প্রশ্রয় দিই না, নিন-নে আপনাদের দাবি আদায় করে।

সতীশ। শৈল, যত তোমার সত্য আমার বেলায়। আর, এদের সামনে সত্যের অপলাপ–প্রশ্রয় দেও না বলতে চাও!

শৈল। কী প্রশ্রয় দিয়েছি।

সতীশ। এইমাত্র মাথার দিব্যি দিয়ে আমাকে চা খাওয়াতে বস নি? শ্রীহস্তে অজীর্ণ রোগের পত্তন আরম্ভ, তবু আমাকে বলে লক্ষ্মীছাড়া!

শচীন। লোকটা লোভ দেখিয়ে কথা বলছে। শৈলদেবী, যদি শক্ত হয়ে থাকতে পার তা হলে ওকে আমাদের লাইফ- মেম্বর করে নিই।

সতীশ। আচ্ছা, তবে বলি শোনো। চাঁদা পাবা মাত্র যদি পাড়া ছেড়ে দৌড় মার তা হলে এখনই বাকি-বকেয়া সব শোধ করে দিই।

শচীন। শুধু চাঁদা নয়। আমাদের ঘরে নেই চা ঢেলে দেবার লোক, যাদের ঘরে আছে সেখানে পালা করে চা খেতে বেরোই–তার পরে কিছু ভিক্ষে নিয়ে যাই–আজ এসেছি বাঁশরিদেবীর করকমল লক্ষ্য করে।

সতীশ। সৌভাগ্যক্রমে সেই দেবী তার করকমলসুদ্ধ অনুপস্থিত। অতএব ঘড়ি ধরে ঠিক পাঁচ মিনিটের নোটিশ দিচ্ছি, বেরোও তোমরা–ভাগো।

শৈল। আহা, ও কী কথা! না খেয়ে যাবেন কেন। আমি বুঝি পারি নে খাওয়াতে? একটু বসুন, সব ঠিক করে দিচ্ছি।

[ শৈলের প্রস্থান

সতীশ। কিন্তু, ঐ যে ভিক্ষার কথাটা বললে, ভালো ঠেকল না। উদ্দেশ্যও বুঝতে পারছি নে।

সুধাংশু। কিংখাবের দোকানে আমাদের সমবেত দেনা আছে, আজ সমবেত চেষ্টায় শোধ করতে হবে।

সতীশ। কিংখাব! ভাবী লক্ষ্মীর আসন-রচনা?

শচীন। ঠিক তাই।

সতীশ। আশ্চর্য দূরদর্শিতা—

শচীন। না হে, অদূরদর্শিতা প্রমাণ করে দেব অবিলম্বে।