মালিনী
রয়েছি বিস্মিত। হাঁ গো, জন্মিলি যেখানে
সেখানে কি স্থান নাই তোর? মা আমার,
তুই কি জগৎলক্ষ্মী, জগতের ভার
পড়েছে কি তোরি ’পরে? নিখিলসংসার
তুই বিনা মাতৃহীনা, যাবি তারি কাছে
নূতন আদরে— আমাদের মা কে আছে
তুই চলে গেলে?
মালিনী।               আমি স্বপ্ন দেখি জেগে,
শুনি নিদ্রাঘোরে, যেন বায়ু বহে বেগে,
নদীতে উঠিছে ঢেউ, রাত্রি অন্ধকার,
নৌকাখানি তীরে বাঁধা— কে করিবে পার,
কর্ণধার নাই— গৃহহীন যাত্রী সবে
বসে আছে নিরাশ্বাস— মনে হয় তবে
আমি যেন যেতে পারি, আমি যেন জানি
তীরের সন্ধান— মোর স্পর্শে নৌকাখানি
পাবে যেন প্রাণ, যাবে যেন আপনার
পূর্ণ বলে— কোথা হতে বিশ্বাস আমার
এল মনে? রাজকন্যা আমি, দেখি নাই
বাহির-সংসার— বসে আছি এক ঠাঁই
জন্মাবধি, চতুর্দিকে সুখের প্রাচীর,
আমারে কে করে দেয় ঘরের বাহির
কে জানে গো। বন্ধ কেটে দাও মহারাজ,
ওগো, ছেড়ে দে মা, কন্যা আমি নহি আজ,
নহি রাজসুতা— যে মোর অন্তরযামী
অগ্নিময়ী মহাবাণী, সেই শুধু আমি।
মহিষী।     শুনিলে তো মহারাজ? এ কথা কাহার?
শুনিয়া বুঝিতে নারি। এ কি বালিকার?
এই কি তোমার কন্যা? আমি কি আপনি
ইহারে ধরেছি গর্ভে?
রাজা।                         যেমন রজনী
উষারে জনম দেয়। কন্যা জ্যোতির্ময়ী
রজনীর কেহ নহে, সে যে বিশ্বজয়ী