মালিনী
ধরেছিনু তোরে, ওরে অহংকারী মেয়ে?
জানিস, আমার পিতা তোর পিতা চেয়ে
শতগুণে ধনী, তাই, ধনরত্নমানে
এত তাঁর হেলা।
মালিনী। সে তো সকলেই জানে।
যেদিন পিতৃব্য তব, পিতৃধনলোভে
বঞ্চিলেন পিতারে তোমার, মনঃক্ষোভে
ছাড়িলেন গৃহ তিনি। সর্ব ধনজন
সম্পদ সহায় করিলেন বিসর্জন
অকাতর মনে ; শুধু সযত্নে আনিলা
পৈতৃক দেবতামূর্তি শালগ্রামশিলা
দরিদ্রকুটিরে। সেই তাঁর ধর্মখানি
মোর জন্মকালে মোরে দিয়েছ, মা, আনি—
আর কিছু নহে। থাক্-না মা, সর্বক্ষণ
তব পিতৃভবনের দরিদ্রের ধন
তোমারি কন্যার হৃদে। আমার পিতার
যা-কিছু ঐশ্বর্য আছে ধনরত্নভার
থাক্ রাজপুত্রতরে।
মহিষী। কে তোমারে বোঝে
মা আমার! কথা শুনে জানি না কেন যে
চক্ষে আসে জল। যেদিন আসিলি কোলে
মায়েরে ব্যাকুল করি, কে জানিত তবে
বাক্যহীন মূঢ় শিশু, ক্রন্দনকল্লোলে
সেই ক্ষুদ্র মুগ্ধ মুখ এত কথা কবে
দুই দিন পরে। থাকি তোর মুখ চেয়ে,
ভয়ে কাঁপে বুক। ও মোর সোনার মেয়ে,
এ ধর্ম কোথায় পেলি, কী শাস্ত্রবচন?
আমার পিতার ধর্ম সে তো পুরাতন
অনাদি কালের। কিন্তু মা গো, এ যে তব
সৃষ্টিছাড়া বেদছাড়া ধর্ম অভিনব
আজিকার-গড়া। কোথা হতে ঘরে আসে
বিধর্মী সন্ন্যাসী? দেখে আমি মরি ত্রাসে।