প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
অধ্যাপক। নন্দিনী, যে দিকটাতে ছাই, তোমার দৃষ্টি আজ সেই দিকটাতেই পড়েছে। একবার শিখার দিকে তাকাও, দেখবে তার জিহ্বা লকলক করছে।
নন্দিনী। তোমার কথা বুঝতে পারছি নে।
অধ্যাপক। রাজাকে তো দেখেছ? তার মূর্তি দেখে শুনছি নাকি তোমার মন মুগ্ধ হয়েছে?
নন্দিনী। হয়েছে বৈকি। সে-যে অদ্ভুত শক্তির চেহারা।
অধ্যাপক। সেই অদ্ভুতটি হল যার জমা, এই কিম্ভূতটি হল তার খরচ। ঐ ছোটোগুলো হতে থাকে ছাই, আর ঐ বড়োটা জ্বলতে থাকে শিখা। এই হচ্ছে বড়ো হবার তত্ত্ব।
নন্দিনী। ও তো রাক্ষসের তত্ত্ব।
অধ্যাপক। তত্ত্বর উপর রাগ করা মিছে। সে ভালোও নয়, মন্দও নয়। যেটা হয় সেটা হয়, তার বিরুদ্ধে যাও তো হওয়ারই বিরুদ্ধে যাবে।
নন্দিনী। এই যদি মানুষের হওয়ার রাস্তা হয়, তা হলে চাই নে আমি হওয়া— আমি ঐ ছায়াদের সঙ্গে চলে যাব, আমাকে রাস্তা দেখিয়ে দাও।
অধ্যাপক। রাস্তা দেখাবার দিন এলে এরাই দেখাবে, তার আগে রাস্তা বলে কোনো বালাই নেই। দেখো-না, পুরাণবাগীশ আস্তে আস্তে কখন সরে পড়েছেন, ভেবেছেন পালিয়ে বাঁচবেন। একটু এগোলেই বুঝবেন বেড়াজাল এখান থেকে শুরু করে বহু যোজন দূর পর্যন্ত খুঁটিতে খুঁটিতে বাঁধা। নন্দিনী, রাগ করছ তুমি। তোমার কপোলে রক্তকরবীর গুচ্ছ আজ প্রলয়গোধূলির মেঘের মতো দেখাচ্ছে।
নন্দিনী। (জানলা ঠেলে) শোনো, শোনো।
অধ্যাপক। কাকে ডাকছ তুমি।
নন্দিনী। জালের কুয়াশায় ঢাকা তোমাদের রাজাকে।
অধ্যাপক। ভিতরকার কপাট পড়ে গেছে, ডাক শুনতে পাবে না।
নন্দিনী। বিশুপাগল, পাগলভাই!
অধ্যাপক। তাকে ডাকছ কেন।
নন্দিনী। এখনো-যে ফিরল না। আমার ভয় করছে।
অধ্যাপক। একটু আগেই তোমার সঙ্গেই তো দেখেছি।
নন্দিনী। সর্দার বললে, রঞ্জনকে চিনিয়ে দেবার জন্যে তার ডাক পড়েছে। সঙ্গে যেতে চাইলুম, দিলে না। — ও কিসের আর্তনাদ।
অধ্যাপক। এ বোধ হচ্ছে সেই পালোয়ানের।