প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
অধ্যাপক। সত্যি কথা বলব? আমি ওকে ভালোবাসি।
পুরাণবাগীশ। বল কী হে!
অধ্যাপক। তুমি জানো না, ও এত বড়ো যে, ওর দোষগুলোও ওকে নষ্ট করতে পারে না।
সর্দার। ওহে বস্তুবাগীশ, বেছে বেছে এই মানুষটিকে এনেছ বুঝি! ওঁর বিদ্যের বিবরণ শুনেই আমাদের রাজা ক্ষেপে উঠেছে।
অধ্যাপক। কিরকম?
সর্দার। রাজা বলে, পুরাণ বলে কিছুই নেই। বর্তমান কালটাই কেবল বেড়ে বেড়ে চলেছে।
পুরাণবাগীশ। পুরাণ যদি নেই তা হলে কিছু আছে কী করে? পিছন যদি না থাকে তো সামনেটা কি থাকতে পারে?
সর্দার। রাজা বলেন, মহাকাল নবীনকে সম্মুখে প্রকাশ করে চলেছে, পণ্ডিত সেই কথাটাকে চাপা দিয়ে বলে : মহাকাল পুরাতনকে পিছনে বয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
অধ্যাপক। নন্দিনীর নিবিড় যৌবনের ছায়াবীথিকায় নবীনের মায়ামৃগীকে রাজা চকিতে চকিতে দেখতে পাচ্ছেন, ধরতে পারছেন না— রেগে উঠছেন আমার বস্তুতত্ত্বর উপর।
নন্দিনী। সর্দার! সর্দার! ও কী! ও কারা!
সর্দার। কী গো নন্দিনী, তোমার কুঁদফুলের মালা পরব যখন ঘোর রাত হবে। অন্ধকারে যখন আমার বারো-আনাই অস্পষ্ট হয়ে উঠবে তখন হয়তো ফুলের মালায় আমাকেও মানাতে পারে।
নন্দিনী। চেয়ে দেখো, ও কী ভয়ানক দৃশ্য! প্রেতপুরীর দরজা খুলে গেছে নাকি! ঐ কারা চলেছে প্রহরীদের সঙ্গে? ঐ-যে বেরিয়ে আসছে রাজার মহলের খিড়কি-দরজা দিয়ে?
সর্দার। ওদের আমরা বলি ‘রাজার এঁটো’।
নন্দিনী। মানে কী?
সর্দার। মানে একদিন তুমিও বুঝবে, আজ থাক্।
নন্দিনী। কিন্তু এ-সব কী চেহারা! ওরা কি মানুষ! ওদের মধ্যে মাংসমজ্জা মনপ্রাণ কিছু কি আছে!
সর্দার। হয়তো নেই।
নন্দিনী। কোনোদিন ছিল?
সর্দার। হয়তো ছিল।
নন্দিনী। এখন গেল কোথায়?
সর্দার। বস্তুবাগীশ, পার তো বুঝিয়ে দাও, আমি চললুম।
নন্দিনী। ও কী, ঐ-সব ছায়াদের মধ্যে যে চেনা মুখ দেখছি। ঐ তো নিশ্চয় আমাদের অনুপ আর উপমন্যু। অধ্যাপক, ওরা আমাদের পাশের গাঁয়ের লোক। দুই ভাই মাথায় যেমন লম্বা গায়ে তেমনি শক্ত, ওদের সবাই বলে তাল-তমাল। আষাঢ়-চতুর্দশীতে আমাদের নদীতে বাচ খেলতে আসত। মরে যাই! ওদের এমন দশা কে করলে? ঐ-যে দেখি শক্লু, তলোয়ারখেলায় সব্বার আগে