পরিশিষ্ট
করিয়াছে; কিন্তু তাই বলিয়া তিনি পারিবারিক ও সামাজিক জীবনের বিবিধ কর্মের দায়িত্ব এড়াইতে চাহেন নাই। ‘কর্ম্মণ্যেবাধিকারস্তে মা ফলেষু কদাচন’ গীতায় উপদিষ্ট এই সত্য তিনি নিজ জীবনে পালন করিয়া গিয়াছেন। নাবিকের মতন তিনি জীবনের বোঝাই তরী সংকট-সংকূল সমুদ্রের দুঃখকষ্ট ও পরীক্ষার মধ্য দিয়া চালাইয়া লইয়া গিয়াছেন।

জীবনযুদ্ধের কর্মব্যস্ততার মধ্যেও পরিপূর্ণভাবে বিবিক্ত থাকিতে হইবে— পিতৃদেবের উদাহরণ হইতে এই শিক্ষাই আমি লাভ করিয়াছি এবং দৃঢ়তাসহকারে এই কথা বলিতে পারি যে, এই প্রতিষ্ঠান গঠনে যে চল্লিশ বৎসর ব্যয়িত হইয়াছে, তাহাতে এই শিক্ষা আমার বিশেষ কাজে আসিয়াছে। এই সময়ে আমি বহু ও বিবিধ দুর্ভাগ্যের আঘাতে জর্জরিত ও নিরাশ হইয়াছি, বহুবার ক্ষতিগ্রস্ত হইয়াছি। বহু দুঃখ ভোগ করিয়াছি। উদাসীন জনসাধারণের হৃদয়হীন অবহেলা সহ্য করিয়াছি। এই প্রতিকূলতার দিনে আমার পিতৃদেবের মহান ভাব আমাকে পথ দেখাইয়াছে। ইহাকে আমি আমার জীবনের একটি শ্রেষ্ঠতম সম্পদ বলিয়া বিবেচনা করি।

বহু বাধা, বিপদ সত্ত্বেও আমার জীবনের দীর্ঘ দিন ধরিয়া আমি এই আশ্রমটি গড়িতে চেষ্টা করিয়াছি— কোনো পার্থিব উদ্দেশ্য সাধনের জন্য নহে। এই আশ্রমে এবং আশ্রমের মধ্য দিয়া আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ আদর্শকে উপলব্ধি করিবার দৃড় ইচ্ছার বশে এই চেষ্টা করিয়াছি। যাহারা স্বার্থ খোঁজে, যাহারা আত্ম-প্রচারের অভিলাষী, এই স্থান তাহাদের জন্য নয়। যাহারা প্রেম ও ভ্রাতৃত্বের সংস্কৃতিগত সংযোগের মধ্য দিয়ে মানুষের অন্তর্লোকের পুনরুজ্জীবন চায়, এই স্থান তাহাদেরই মিলন-ভূমি। আজিকার উৎসব দিনের ইহাই বাণী।

 

 

মুন্সী প্রেমচাঁদ
সাহিত্যিক হিসাবে প্রেমচাঁদজীর খ্যাতি কেবলমাত্র প্রদেশ মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না, তাঁহার মৃত্যুতে আজ আমরাও অভাব বোধ করিতেছি।
শান্তিনিকেতন ১৫ অক্টোবর ১৯৩৬

 

 

মহম্মদ ইকবাল
স্যার মহম্মদ ইকবালের কবিত্বের প্রতি সমগ্র ভারতের শ্রদ্ধা নিবেদনে আপনাদের সহিত আন্তরিকভাবে যোগদান করিতেছি। উর্দু ভাষায় অনভিজ্ঞতার দরুন আমি তাঁহার রচিত প্রাঞ্জল মৌলিক রচনা পাঠের আনন্দ হইতে বঞ্চিত। এজন্য আমি সততই দুঃখ অনুভব করিয়া থাকি। দীর্ঘকাল জীবিত থাকিয়া তিনি দেশের সাহিত্যভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করুন, এই প্রার্থনা করি।
লাহোর, ১৩ ডিসেম্বর ১৯৩৭