পরিশিষ্ট
হজরত মহম্মদ
ইসলাম পৃথিবীর মহত্তম ধর্মের মধ্যে একটি। এই কারণে ইহার অনুবর্তীগণের দায়িত্ব অসীম, যেহেতু আপন জীবনে এই ধর্মের মহত্ত্ব সম্বন্ধে তাঁহাদিগকে সাক্ষ্য দিতে হইবে। ভারতে যে সকল বিভিন্ন ধর্মসমাজ আছে তাহাদের পরস্পরের প্রতি সভ্যজাতিযোগ্য মনোভাব যদি উদ্‌ভাবিত করিতে হয় তবে কেবলমাত্র রাষ্ট্রিক স্বার্থবুদ্ধি দ্বারা তাহা সম্ভবপর হইবে না, তবে আমাদিগকে নির্ভর করিতে হইবে সেই অনুপ্রেরণার প্রতি, যাহা ঈশ্বরের প্রিয়পাত্র ও মানবের বন্ধু সত্যদূতদিগের অমর জীবন হইতে চির-উৎসারিত। অদ্যকার এই পুণ্য অনুষ্ঠান উপলক্ষে মস্লেম ভ্রাতাদের সহিত একযোগ ইসলামের মহাঋষির উদ্দেশে আমার ভক্তি-উপহার অর্পণ করিয়া উৎপীড়িত ভারতবর্ষের জন্য তাঁহার আশীর্বাদ ও সান্ত্বনা কামনা করি। ১০ আষাঢ় ১৩৪১

 

 

রামচন্দ্র শর্মা
পণ্ডিত রামচন্দ্র শর্মা আত্মত্যাগের ব্রত অবলম্বন করিয়াছেন, আমার দুর্বলচেতা— তাঁহার সংকল্পের ফল কী হইবে, তাহা বিচার করিবার অধিকার আমাদের নাই। কিন্তু বাংলায় শক্তিপূজায় পশুবলি বন্ধ করা যে সহজ কথা নয়, তাহা নিঃসন্দেহ। আমি জানি রামচন্দ্র শর্মার উদ্দেশ্য আপাতত সফল হইবে না। কিন্তু তাঁহার আত্মত্যাগের তুলনা নাই। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের আদর্শ দিয়া তাহার বিচার করিলে চলিবে না। তাঁহার আত্মবলিদানে আমরা ব্যথিত হইব, কিন্তু তাঁহার আত্মত্যাগের জন্য ওই মূল্যই আমাদের দিতে হইবে। তিনি আত্মবলি দিলে কী ফল ফলিবে, তাহা আমি জানি না, কিন্তু তাঁহার দৃষ্টান্ত যে ইতিহাসের অমূল্য সম্পদ হইয়া থাকিবে, সেই বিষয়ে আমি নিঃসন্দেহ। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে পার্থের মন অবসন্ন হইয়া পড়িলে শ্রীকৃষ্ণ তাঁহাকে যে উপদেশ দিয়াছিলেন, এই সম্পর্কে তাহাই আমার মনে হইতেছে। আমরা তাঁহার সংকল্পে কোনো দুর্বলতা প্রকাশ করিলে, তাহা আমাদের পক্ষে গৌরবের বিষয় হইবে না। পণ্ডিত রামচন্দ্র শর্মা তাঁহার কর্তব্য ভালোই জানেন, তিনি আরও জানেন যে, “নিজ নিজ বিশ্বাসের জন্য জীবন উৎসর্গ করাও বাঞ্ছনীয়।”

 

 

রুডিয়ার্ড কিপ্‌লিং
যে কন্ঠ ইংরাজী ভাষায় নূতন শক্তি সঞ্চার করিত তাহা আজ নীরব হইয়াছে। ইংরাজী সাহিত্যানুরাগীদের মধ্যে আমি তাঁহার মৃত্যুতে আন্তরিক শোক প্রকাশ করিতেছি।
শান্তিনিকেতন ১৮ জানুয়ারী