পিত্রার্কা ও লরা

সুকোমল ম্লান ভাব কপোলে তাঁহার

ঢাকিল সে হাসি তাঁর, ক্ষুদ্র মেঘ যথা!

প্রেম হেন উথলিল হৃদয়ে আমার

আঁখি কৈল প্রাণপণ কহিবারে কথা!

তখন জানিনু আমি স্বরগ-আলয়ে

কী করিয়া কথা হয় আত্মায় আত্মায়

উজলি উঠিল তাঁর দয়া দিকচয়ে

আমি ছাড়া আর কেহ দেখে নি গো তায়!

            ...

সবিষাদে অবনত নয়ন তাঁহার

নীরবে আমারে যেন কহিল সে এসে,

‘কে গো হায় বিশ্বাসী এ বন্ধুরে আমার

লইয়া যেতেছে ডাকি এত দূর-দেশে?’

শীতের পত্রহীন তরুশাখায় বসিয়া সন্ধ্যাকালে বিহঙ্গম বিষণ্ন-সংগীত গাহিতেছিল, কবির হৃদয়ের স্বরে তাহার স্বর মিলিয়া গেল, তিনি গাহিয়া উঠিলেন-

হা রে হতভাগ্য বিহঙ্গম সঙ্গীহীন!

সুখ-ঋতু অবসানে গাহিছিস গীত!

ফুরাইছে গ্রীষ্ম ঋতু ফুরাইছে দিন

আসিছে রজনী ঘোর আসিতেছে শীত!

ওরে বিহঙ্গম, তুই দুখ-গান গাস

যদি জানিতিস কী যে দহিছে এ প্রাণ

তা হলে এ বক্ষে আসি করিতিস বাস,

এর সাথে মিশাতিস বিষাদের গান!

কিন্তু হা–জানি না তোর কিসের বিষাদ,

ভ্রমিস রে যার লাগি গাহিয়া গাহিয়া,

হয়তো সে বেঁচে আছে বিহঙ্গিনী প্রিয়া,

কিন্তু মৃত্যু এ কপালে সাধিয়াছে বাদ!

সুখ দুঃখ চিন্তা আশা যা-কিছু অতীত,

তাই নিয়ে আমি শুধু গাহিতেছি গীত!

যখন তাঁহার লরার বর্তমানে প্রকৃতির মুখশ্রী আরও উজ্জ্বলতর হইয়া উঠিত, তখন তিনি গাহিতেন-

কী সৌন্দর্য-স্রোত হোথা পড়িছে ঝরিয়া!