পিত্রার্কা ও লরা

ঘুমাইবে পৃথিবীর দুখ শোক ভুলি!

            ...

বোধ হয় একদিন সে মোর প্রেয়সী

স্বর্গীয়-সুন্দরী সেই নিষ্ঠুর-দয়ালু–

একদিন এইখানে আসিবে কি ভাবি,

যেইখানে একদিন মুগ্ধ নেত্র মোর

উজ্জ্বল সে নেত্র-‘পরে রহিত চাহিয়া!

হয়তো নয়ন তাঁর আপনা আপনি

খুঁজিয়া খুঁজিয়া মোরে চারি দিক পানে

আমার কবর সেই পাইবে দেখিতে!

হয়তো শিহরি তার উঠিবে অন্তর,

হয়তো একটি তার বিষাদ-নিশ্বাস

জাগাইবে মোর ‘পরে স্বর্গের করুণা!

            ...

এখনো সে মনে পড়ে –যবে পুষ্প বন

বসন্তের সমীরণে হইয়া বিনত

সুরভিকুসুমরাশি করিত বর্ষণ,

তখন রক্তিম-মেঘে হইয়া আবৃত

বসিতেন প্রকৃতির উপহার মাঝে।

কভু বা বসনে তাঁর কভু বা কুন্তলে

প্রকৃতি কুসুম-গুচ্ছ দিত সাজাইয়া।

চারি দিকে তাঁর, কভু তটিনী-সলিলে-

কভু বা তৃণের ‘পরে পড়িত ঝরিয়া

পুষ্প বন হতে কত পুষ্প রাশি রাশি!

চারি দিকে তরুলতা কহিত মর্মরি

‘প্রেম হেথা করিয়াছে সাম্রাজ্য বিস্তার!’

পূর্বেই বলিয়াছি, পিত্রার্কার মনে মনে বিশ্বাস ছিল, বা এক-একবার বিশ্বাস হইত যে লরা তাঁহাকে ভালোবাসে। অনেক কবিতাতেই তাঁহার এই বিশ্বাস প্রকাশ পাইত। অনুরাগের নেত্র অনুরাগের কাহিনী যেমন পড়িতে পারে, যুক্তিকে তাহার নিকট অনেক সময় পরাস্ত মানিতে হয়। লরার দৃঢ় দৃষ্টির মধ্যে হয়তো পিত্রার্কা গুপ্তপ্রেমের আভা দেখিতে পাইয়াছিলেন, যুক্তি এখন তাহা অনুধাবন করিতে পারিতেছে না, হয়তো তখনো পারিত না। এক সময়ে পিত্রার্কা যখন দূর-দেশে ভ্রমণ করিবার জন্য যাইতেছিলেন, তখন লরাকে দেখিয়া তিনি কহিতেছেন-