ভূমিকা

মাতৃভূমির যথার্থ স্বরূপ গ্রামের মধ্যেই;এইখানেই প্রানের নিকাতন;লক্ষ্মী এইখানেই তাঁহার আসন সন্ধান করেন।

সেই আসন অনেককাল প্রস্তু হয় নাই।ধনপতি কুবের দেশের লোকের মনকে টানিয়াছে শহরের যক্ষপুরীতে।শ্রীকে তাঁহার অন্নক্ষেত্রে আবাহন করিতে আমরা বহুকাল ভুলিয়াছি।সঙ্গে সঙ্গে দেশ হইতে সৌন্দর্য গেল,স্বাস্হ্য গেল,বিদ্যা গেল,আনন্দ গেল.প্রাণও অবশিষ্ট আছে অতি অল্পেই।আজ পল্লীর জলাশয় শুষ্ক,বায়ু দূষিত,পথ দুর্গম,ভান্ডার শূন্য,সমাজবন্ধন শিথিল,ঈর্ষা কলহ কদাচার লোকালয়ের জীর্ণতাকে প্রতিমুহূর্তে জীর্ণতর করিয়া তুলিতেছে।সময় আর অধিক নাই।শ্রীহীন অনাদৃত দেশে যমরাজের শাসন দিনে দিনে রুদ্রমূর্তিত প্রবল হইয়া উঠিল।

আজ যাঁহারা জীবধাত্রী পল্লিভূমির রিক্তস্তনে স্তন্য সঞ্চার করিবার ব্রত লইয়াছেন, তাঁহারা নিরানন্দ অন্ধকার ঘরে আলো আনিবার জন্য প্রদীপ জ্বালিতেছেন,মঙ্গলদাতা বিধাতা তাঁহাদের প্রতি প্রসন্ন হউন;ত্যাগের দ্বারা,তপস্যা-দ্বারা,সেবা-দ্বারা,পরস্পর মৈত্রীবন্ধন -দ্বারা,বিক্ষিপ্ত শক্তির একত্র সমবায়ের দ্বারা ভারতবাসীর বহুদিনসঞ্চিত মূঢ়তা ও ঔদাসীন্যজনিত অপরাধরাশির সঙ্গে সঙ্গে দেবতার অভিশাপকে সেই সাধকেরা দেশ হইতে তিরস্কৃত করুন এই আমি একান্তমনে কামনা করি।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর