মেঘনাদবধ কাব্য
প্রমীলা কহিলেন,

ও পদ-প্রাসাদে, নাথ, ভববিজয়িনী

দাসী, কিন্তু মনমথে না পারি জিনিতে।

অবহেলি, শরানলে, বিরহ অনলে

দুরূহ) ডরাই সদা;                    ইত্যাদি

যেন স্ত্রী-পুরুষে ছড়া-কাটাকাটি চলিতেছে। পঞ্চম সর্গের শেষভাগে পুনরায় ইন্দ্রজিতের অবতারণা করা হইয়াছে।

কুসুমশয়নে যথা সুবর্ণ মন্দিরে,

বিরাজে রাজেন্দ্র বলী ইন্দ্রজিৎ, তথা

পশিল কূজন ধ্বনি সে সুখ সদনে।

জাগিলা বীর কুঞ্জর কুঞ্জবন গীতে।

প্রমীলার করপদ্ম করপদ্মে ধরি

রথীন্দ্র, মধুর স্বরে, হায় রে, যেমতি

নলিনীর কানে অলি কহে গুঞ্জরিয়া

প্রেমের রহস্য কথা, কহিলা (আদরে

চুম্বি নিমীলিত আঁখি) ডাকিছে কূজনে,

হৈমবতী উষা তুমি, রূপসি, তোমারে

পাখিকুল! মিল প্রিয়ে, কমললোচন।

উঠ, চিরানন্দ মোর, সূর্যকান্ত মণি

সেম এ পরান কান্তা, তুমি রবিচ্ছবি;-

তেজোহীন আমি তুমি মুদিলে নয়ন।

ভাগ্যবৃক্ষে ফলোত্তম তুমি হে জগতে

আমার! নয়নতারা! মহার্ঘরতন।

উঠি দেখো শশিমুখি, কেমনে ফুটিছে,

চুরি করি কান্তি তব মঞ্জুকুঞ্জবনে

কুসুম!                              ইত্যাদি।

এই দৃশ্যে মেঘনাদের কোমলতা সুন্দর বর্ণিত হইয়াছে। প্রমীলার নিকট হইতে ইন্দ্রজিতের বিদায়টি সুন্দর হইয়াছে, তাহার মধ্যে বাক্‌চাতুরী কিছুমাত্র নাই। কিন্তু আবার একটি ‘যথা’ আসিয়াছে-

যথা যবে কুসুমেষু ইন্দ্রের আদেশে

রতিরে ছাড়িয়া শূর, চলিলা কুক্ষণে

ভাঙিতে শিবের ধ্যান; হায় রে, তেমতি

চলিলা কন্দর্পরূপী ইন্দ্রজিৎ বলী,

ছাড়িয়া রতি-প্রতিমা প্রমীলা সতীরে।