মেঘনাদবধ কাব্য

কী দোষ রাধার পাইলে?

শ্যাম, ভেবে দেখো মনে, তোমারি কারণে

ব্রজাঙ্গনাগণে উদাসী।

নহি অন্য ভাব, শুন হে মাধব

       তোমারি প্রেমের প্রয়াসী।

ঘোরতর নিশি, যথা বাজে বাঁশি,

       তথা আসি গোপী সকলে,

               দিয়ে বিসর্জন কুল শীলে।

এতেই হলাম দোষী,              তাই তোমায় জিজ্ঞাসি

               এই দোষে কি হে ত্যজিলে?

শ্যাম, যাও মধুপুরী,                   নিষেধ না করি

                থাকো হরি যথা সুখ পাও।

একবার, সহাস্য বদনে                  বঙ্কিম নয়নে

                ব্রজগোপীর পানে ফিরে চাও।

            জনমের মতো, শ্রীচরণ দুটি,

                      হেরি হে নয়নে শ্রীহরি,

            আর হেরিব আশা না করি।

হৃদয়ের ধন তুমি গোপিকার

হৃদে বজ্র হানি চলিলে?

                                                      – হরু ঠাকুর

ইহার মধ্যে বাক্‌চাতুরী নাই, কৃত্রিমতা নাই, ভাবিয়া চিন্তিয়া গড়িয়া পিটিয়া ঘর হইতে রাধা উপমা ভাবিয়া আইসেন নাই, সরল হৃদয়ের কথা নয়নের অশ্রুজলের ন্যায় এমন সহজে বাহির হইতেছে যে; কৃষ্ণকে তাহার অর্থ বুঝিতে কষ্ট পাইতে হয় নাই, আর মাতঙ্গ, ব্রততী, পদাশ্রম, রঙ্গরস প্রভৃতি কথা ও উপমার জড়ামড়িতে প্রমীলা হয়তো ক্ষণেকের জন্য ইন্দ্রজিৎকে ভাবাইয়া তুলিয়াছিলেন।

ইন্দ্রজিতের উত্তর সেইরূপ কৃত্রিমতাময়, কৌশলময়, ঠিক যেন প্রমীলা খুব এক কথা বলিয়া লইয়াছেন, তাহার তো একটা উপযুক্ত উত্তর দিতে হইবে, এইজন্য কহিতেছেন,

ইন্দ্রজিতে জিতি তুমি, সতি,

বেঁধেছ যে দৃঢ় বাঁধে, কে পারে খুলিতে

সে বাঁধে                        ইত্যাদি

সমস্ত মেঘনাদবধ কাব্যে হৃদয়ের উচ্ছ্বাসময় কথা অতি অল্পই আছে, প্রায় সকলগুলিই কৌশলময়। তৃতীয় সর্গে যখন প্রমীলা রামচন্দ্রের ফটক ভেদ করিয়া ইন্দ্রজিতের নিকট আইলেন তখন ইন্দ্রজিৎ কহিলেন,

রক্তবীজে বধি তুমি এবে বিধুমুখী,

আইলা কৈলাস ধামে             ইত্যাদি