সন্ধ্যাসংগীত

দুয়েকটি তারা কভু পড়িছে খসিয়া,

হতবুদ্ধি দুয়েকটি পথহারা মেঘ

অনন্ত আকাশ-রাজ্যে ভ্রমিছে কেবল,

সে নিস্তব্ধ রজনীতে হৃদয়ে যেমন

একে একে সব কথা উঠে গো জাগিয়া,

তেমনি দেখিনু যেই ওই মুখখানি

স্মৃতি-জাগরণকারী রাগিণীর মতো

ওই মুখখানি তব দেখিনু যেমনি

একে একে পুরাতন সব স্মৃতিগুলি

জীবন্ত হইয়া যেন জাগিল হৃদয়ে।

মনে আছে সেই সখি আর-এক দিন

এমনি গম্ভীর সন্ধ্যা, এই নদীতীর,

এইখানে এই হাত ধরিয়া তোমার

কাতরে কহেছি আমি নয়নের জলে,

‘ বিদায় দাও গো এবে চলিনু বিদেশে,

দেখো সখি এত দিন বাসিয়াছ ভালো,

দুদিন না দেখে যেন যেয়ো না ভুলিয়া!

সংসারের কর্ম হতে অবসর লয়ে

আবার ফিরিয়া যবে আসিব দামিনী,

নব-অতিথির মতো ভেবো না আমারে

সম্ভ্রমের অভিনয় কোরো না বালিকা!’

কিছুই উত্তর তার দিলে না তখন,

শুধু মুখপানে চেয়ে কাতর নয়নে

ভর্ৎসনার অশ্রুজল করিলে বর্ষণ।

যেন এই নিদারুণ সন্দেহের মোর

অশ্রুজল ছাড়া আর নাইকো উত্তর!

আবার কহিনু আমি ওই মুখ চেয়ে,

‘ কে জানে মনের মধ্যে কি হয়েছে মোর

আশঙ্কা হতেছে যেন হৃদয়ে আমার

ওই স্নেহ-সুধামাখা মুখখানি তোর

এ জনমে আর বুঝি পাব না দেখিতে।’

নীরব গম্ভীর সেই সন্ধ্যার আঁধারে