চণ্ডালিকা
ঘটিয়েছে সে। আরো আশ্চর্য কি ঘটবে না, আসবে না কি আমার পাশে। আমার আধো আঁচলে বসবে না?

মা। তাঁকে আনতে পারি হয়তো, তুই তার মূল্য দিতে পারবি? তোর কিচ্ছুই থাকবে না বাকি!

প্রকৃতি। না, কিছুই থাকবে না। আমার জন্মজন্মান্তরের সেই দায়, কিচ্ছুই থাকবে না, একেবারে সমস্তই মিটিয়ে দিতে পারলেই বেঁচে যাব। তাই তো চাই তাঁকে। কিচ্ছু থাকবে না আমার। আমার যুগযুগের অপেক্ষা করে থাকা এই জন্মেই সার্থক হবে, মন কেবলই তাই বলছে। সার্থক হবে। সেইজন্যেই তো শুনলুম এমন আশ্চর্য কথা— জল দাও। আজ জেনেছি, আমিও পারি দিতে। এই কথা সবাই আমাকে ভুলিয়ে রেখেছিল। দেব, দেব, আজ আমার সব কিছু দেব বলেই বসে আছি তাঁর পথ চেয়ে।

মা। তুই ধর্ম মানিস নে?

প্রকৃতি। কী করে বলব! তাঁকেই মানি যিনি আমাকে মানেন। যে-ধর্ম অপমান করে সে-ধর্ম মিথ্যে। অন্ধ ক’রে, মুখ বন্ধ করে সবাই মিলে সেই ধর্ম আমাকে মানিয়েছে। কিন্তু, সেদিন থেকে এই ধর্ম মানা আমার বারণ। কোনো ভয় আর নেই আমার— পড়্‌ তোর মন্তর, ভিক্ষুকে নিয়ে আয় চণ্ডালের মেয়ের পাশে। আমিই দেব তাঁকে সম্মান। এত বড়ো সম্মান আর কেউ দিতে পারবে না।

গান

আমি   তারেই জানি তারেই জানি

            আমায় যে জন আপন জানে—

        তারি দানে দাবি আমার

            যার অধিকার আমার দানে।

        যে আমারে চিনতে পারে

        সেই চেনাতেই চিনি তারে,

        একই আলো চেনার পথে

            তার প্রাণে আর আমার প্রাণে।

আপন মনের অন্ধকারে ঢাকল যারা

আমি   তাদের মধ্যে আপনহারা।

        ছুঁইয়ে দিল সোনার কাঠি,

        ঘুমের ঢাকা গেল ফাটি,

        নয়ন আমার ছুটেছে তার

            আলো-করা মুখের পানে॥

মা। শাপ লাগার ভয় করিস নে তুই?

প্রকৃতি। শাপ তো লেগেই আছে জন্মকাল থেকে। এক শাপের বিষে আর-এক শাপের বিষ ক্ষয় হয়ে যায়। কোনো কথাই শুনব না, মা, শুনব না, শুনব না। শুরু করে দে মন্ত্র। পারব না দেরি সইতে।

মা। আচ্ছা, তা হলে কী নাম তাঁর বল্‌।

প্রকৃতি। তাঁর নাম আনন্দ।