ফাঁকি

বিনুর বয়স তেইশ তখন, রোগে ধরল তারে।

                   ওষুধে ডাক্তারে

               ব্যাধির চেয়ে আধি হল বড়ো ;

নানা ছাপের জমল শিশি, নানা মাপের কৌটো হল জড়ো।

     বছর দেড়েক চিকিৎসাতে করলে যখন অস্থি জরজর

          তখন বললে, “ হাওয়া বদল করো। ”

     এই সুযোগে বিনু এবার চাপল প্রথম রেলের গাড়ি,

          বিয়ের পরে ছাড়ল প্রথম শ্বশুরবাড়ি।

 

 

          নিবিড় ঘন পরিবারের আড়ালে আবডালে

          মোদের হত দেখাশুনো ভাঙা লয়ের তালে ;

                   মিলন ছিল ছাড়া ছাড়া,

        চাপা হাসি টুকরো কথার নানান জোড়াতাড়া।

আজকে হঠাৎ ধরিত্রী তার আকাশভরা সকল আলো ধরে

                   বর বধূরে নিলে বরণ করে।

          রোগা মুখের মস্ত বড়ো দুটি চোখে

     বিনুর যেন নতুন করে শুভদৃষ্টি হল নতুন লোকে।

               রেল-লাইনের ওপার থেকে

          কাঙাল যখন ফেরে ভিক্ষা হেঁকে,

                বিনু আপন বাক্স খুলে

          টাকা সিকে যা হাতে পায় তুলে

                   কাগজ দিয়ে মুড়ে

                   দেয় সে ছুঁড়ে ছুঁড়ে।

          সবার দুঃখ দূর না হলে পরে

আনন্দ তার আপনার ই ভার বইবে কেমন করে।

     সংসারের ঐ ভাঙা ঘাটের কিনার হতে

আজ আমাদের ভাসান যেন চিরপ্রেমের স্রোতে —

          তাই যেন আজ দানে ধ্যানে

     ভরতে হবে সে — যাত্রাটি বিশ্বে র কল্যাণে।