চামেলিবিতান
চামেলিবিতানের নীচের ছায়ায় আমি বসতুম — ময়ূর এসে বসত উপরে, লতার
আশ্রয়বেষ্টনী থেকে পুচ্ছ ঝুলিয়ে। জানি সে আমাকে কিছুমাত্র
সম্মান করত না, কিন্তু সৌন্দর্যের যে অর্ঘ্যভার সে বহন করে বেড়াত, তার
অজ্ঞাতে আমি নিজেই সেটি প্রতিদিন গ্রহণ করেছি। এমন অসংকোচে সে
যে দেখা দিয়ে যায় এতে আমি কৃতজ্ঞ ছিলুম, সে যে আমাকে ভয় করে নি এ আমার
সৌভাগ্য। আরো তার কয়েকটি সঙ্গী সঙ্গিনী ছিল কিন্তু দূরের
দুরাশায় ওদের কোথায় টেনে নিয়ে গেল, আমিও চলে এসেছি সেই চামেলির সুগন্ধি
ছায়ার আশ্রয় থেকে অন্য জায়গায়। বাইরে থেকে এই পরিবর্তনগুলি
বেশি কিছু নয়, তবু অন্তরের মধ্যে ভাঙাচোরার দাগ কিছু কিছু থেকে যায়।
শুনেছিলুম আমাদের প্রদেশে কোনো-এক নদীগর্ভজাত দ্বীপ ময়ূরের
আশ্রয়। ময়ূর হিন্দুর অবধ্য। মৃগয়াবিলাসী ইংরেজ এই
দ্বীপের নিষেধকে উপেক্ষা করতে পারে নি অথচ গুলি করে ময়ূর মারবার প্রবল
আনন্দ থেকে বঞ্চিত হওয়া তার পক্ষে অসম্ভব হওয়াতে পার্শবর্তী দ্বীপে
খাদ্যের প্রলোভন বিস্তার করে ভুলিয়ে নিয়ে এসে ময়ূর মারত। বাল্মীকির শাপকে
এ যুগের কবি পুনরায় প্রচার না করে থাকতে পারল না।
মা নিষাদঃ প্রতিষ্ঠাং ত্বং
অগমঃ শাশ্বতীঃ সমাঃ।
ময়ূর, কর নি মোরে ভয়,
সেই গর্ব, সেই মোর জয়।
বাহিরেতে আমলকী
করিতেছে ঝকমকি,
বটের উঠেছে কচি পাতা,
হোথায় দুয়ার থেকে
আমারে গিয়েছ দেখে,
খুলিয়া বসেছি মোটা খাতা।
লিখিতেছি নিজ মনে —
হেরি তাই আঁখিকোণে
অবজ্ঞায় ফিরে যাও চলি,
বোঝ না, লেখনী ধরি
কী যে এত খুঁটে মরি,
আমারে জেনেছ মূঢ় বলি।
সেই ভালো জান যদি তাই,
তাহে মোর কোনো খেদ নাই।
তবু আমি খুশি আছি,