প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
|
![]() |
দীর্ঘহ্রস্ব ছন্দ সম্বন্ধে আর-একবার বলি। ও এক বিশেষ ধরনের লেখায় বিশেষ ভাষারীতিতেই চলতে পারে। আকবর বাদশার যোধপুরী মহিষীর জন্যে তিনি মহল বানিয়েছিলেন স্বতন্ত্র, সমগ্র প্রাসাদের মধ্যে সে আপন জাত বাঁচিয়ে নির্লিপ্ত ছিল। বাংলার উচ্চারণরীতিকে মেনে চলে যে-ছন্দ তার চলাফেরা সাহিত্যের সর্বত্র, কোনো গণ্ডির মধ্যে নয়। তা পণ্ডিত-অপণ্ডিত সকল পাঠকের পক্ষেই সুগম। তুমি বলতে পার, সকল কবিতাই সকলের পক্ষে সুগম হবেই এমনতরো কবুলতিনামায় লেখককে সই দিতে বাধ্য করতে পারি নে। সে তর্ক খাটে ভাবের দিক থেকে, চিন্তার দিক থেকে, কিন্তু ভাষার সর্বজনীন উচ্চারণরীতির দিক থেকে নয়। তুমি বেলের শরবতই কর, দইয়ের শরবতই কর, মূল উপাদান জলটা সাধারণ জল– ভাষার উচ্চারণটাও সেইরকম। My heart aches– কোনো ধ্বনিসৌষ্ঠবের খাতিরেই বা বাঙালির অভ্যাসের অনুরোধে heart এর আ এবং aches এর এ-কে হ্রস্ব করা চলবে না। এই কারণে বাংলায় বিশুদ্ধ সংস্কৃত ছন্দ চালাতে গেলে দীর্ঘ স্বরধ্বনির জায়গায় যুক্তবর্ণের ধ্বনি দিতে হয়। সেটার জন্যে বাংলাভাষা ও পাঠককে সর্বদা ঠেলা মারতে হয় না। অথবা দীর্ঘস্বরকে দুই মাত্রার মূল্য দিলেও চলে। যদি লিখতে–
হে অমল চন্দনগঞ্জিত, তনু রঞ্জিত
হিমানীতে সিঞ্চিত স্বর্ণ
তা হলে চতুষ্পাঠীর বহির্বর্তী পাঠকের দুশ্চিন্তা ঘটাতো না।
বাংলায় প্রাক্হসন্ত স্বর দীর্ঘায়িত হয় এ কথা বলেছি। জল এবং জলা, এই দুটো শব্দের মাত্রাসংখ্যা সমান নয়। এই জন্যেই ‘টুমুস্ টুমুস্ বাদ্যি বাজে’ পদটাকে ত্রৈমাত্রিক বলেছি। টু-মু দুই সিলেব্ল্, পরবর্তী হসন্ত স্-ও এক সিলেব্ল্এর মাত্রা নিয়েছে পূর্ববর্তী উ স্বরকে সহজেই দীর্ঘ করে। ‘টুমু টুমু বাজা বাজে’ এবং ‘টুমুস্ টুমুস্ বাদ্যি বাজে’ এক ছন্দ নয়। ‘রণিয়া রণিয়া বাজিছে বাজনা’ এবং ‘টুমুস্ টুমুস্ বাদ্যি বাজে’ এক ওজনের ছন্দ। দুটোই ত্রৈমাত্রিক। আমি প্রচলিত ছড়ার দৃষ্টান্তও দেখিয়েছি।
যখন কবিতাগুলি পড়বে তখন পূর্বাভ্যাস-মতো মনে কোরো না ওগুলো পদ্য। অনেকে সেই চেষ্টা করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে রুষ্ট হয়ে ওঠে। গদ্যের প্রতি গদ্যের সম্মানরক্ষা করে চলা উচিত। পুরুষকে সুন্দরী রমণীর মতো ব্যবহার করলে তার মর্যাদাহানি হয়। পুরুষেরও সৌন্দর্য আছে, সে মেয়ের সৌন্দর্য নয়– এই সহজ কথাটা বলবার প্রয়াস পেয়েছি পরবর্তী পাতাগুলিতে।
‘পুনশ্চ’র কবিতাগুলোকে কোন্ সংজ্ঞা দেবে। পদ্য নয়, কারণ পদ নেই। গদ্য বললে, অতিব্যাপ্তি দোষ ঘটে। পক্ষিরাজ ঘোড়াকে পাখি বলবে না, ঘোড়া বলবে? গদ্যের পাখা উঠেছে এ কথা যদি বলি, তবে শত্রুপক্ষ বলে বসবে, ‘পিঁপিড়ার পাখা ওঠে মরিবার তরে।’ জলে স্থলে যে সাহিত্য বিভক্ত, সেই সাহিত্যে এ জিনিসটা জল নয়, তাই বলে মাটিও নয়। তাহলে খনিজ বলতে দোষ আছে কি। সোনা বলতে পারি এমন অহংকার যদি বা মনে থাকে মুখে বলবার সাহস নেই। না হয় তাঁবাই হল। অর্থাৎ, এমন