পরিশিষ্ট

বিরহ চিরজয়ী

করেছে মধুময়ী

বেদনা মম।

সংস্কৃতের অমিত্রাক্ষররীতি অনুবর্তন করা যেতে পারে। যথা –

অভাগা যক্ষ কবে করিল কাজে হেলা, কুবের তাই তারে দিলেন শাপ,
নির্বাসনে সে রহি প্রেয়সী-বিচ্ছেদে বর্ষ ভরি স’বে দারুণ জ্বালা।
গেল চলি রামগিরি-শিখর-আশ্রমে হারায়ে সহজাত মহিমা তার,
সেখানে পাদপরাজি স্নিগ্ধছায়াবৃত সীতার স্নানে পুত সলিলধারা॥


দিলীপকুমার রায়কে লিখিত

গীতাঞ্জলির কয়েকটি গানের ছন্দ সম্বন্ধে কৈফিয়ত চেয়েছ। গোড়াতেই বলে রাখা দরকার গীতাঞ্জলিতে এমন অনেক কবিতা আছে যার ছন্দোরক্ষার বরাত দেওয়া হয়েছে গানের সুরের’পরে। অতএব, যে-পাঠকের ছন্দের কান আছে তিনি গানের খাতিরে এর মাত্রা কম-বেশি নিজেই দুরন্ত করে নিয়ে পড়তে পারেন, যাঁর নেই তাঁকে ধৈর্য অবলম্বন করতে হবে।

১। ‘নব নব রূপে এসো প্রাণে’– এই গানের অন্তিম পদগুলির কেবল অন্তিম দুটি অক্ষরের দীর্ঘহ্রস্ব স্বরের সম্মান স্বীকৃত হয়েছে। যথা ‘প্রাণে’ ‘গানে’ ইত্যাদি। একটিমাত্র পদে তার ব্যতিক্রম আছে। এসো দুঃখে সুখে, এসো মর্মে– এখানে ‘সুখে’র এ-কারকে অবাঙালি রীতিতে দীর্ঘ করা হয়েছে। ‘সৌখ্যে’ কথাটা দিলে বলবার কিছু থাকত না। তবু সেটাতে রাজি হই নি, মানুষ চাপা দেওয়ার চেয়ে মোটর ভাঙা ভালো।

২। ‘অমল ধবল পা- লে লেগেছে মন্দমধুর হাওয়া’– এ গানে গানই মুখ্য, কাব্য গৌণ। অতএব, তালকে সেলাম ঠুকে ছন্দকে পিছিয়ে থাকতে হল। যদি বল, পাঠকেরা তো শ্রোতা নয়, তারা মাপ করবে কেন। হয়তো করবে না – কবি জোড়হাত করে বলবে, ‘তালদ্বারা ছন্দ রাখিলাম, ত্রুটি মার্জনা করিবেন।’

৩। চৌত্রিশ-নম্বরটাও গান। তবুও এর সম্বন্ধে বিশেষ বক্তব্য হচ্ছে এই যে, যে- ছন্দগুলি বাংলার প্রাকৃত ছন্দ, অক্ষর গণনা করে তাদের মাত্রা নয়। বাঙালি সেটা বরাবর নিজের কানের সাহায্যে উচ্চারণ করে এসেছে। যথা –

বৃষ্টি পড়ে- টাপুর টুপুর, নদেয় এল- বা- ন,
শিবু ঠাকুরের বিয়ে- হবে- তিন কন্যে দা- ন।

আক্ষরিক মাত্রা গুনতি করে একে যদি সংশোধন করতে চাও তাহলে নিখুঁত পাঠান্তরটা দাঁড়াবে এই রকম –

বৃষ্টি পড়ছে টাপুর টুপুর, নদেয় আসছে বন্যা,
শিবু ঠাকুরের বিবাহ হচ্ছে, দান হবে তিন কন্যা।

রামপ্রসাদের একটি গান আছে –

     মা আমায় ঘুরাবি কত
যেন। চোখবাঁধা বলদের মতো।

এটাকে যদি সংশোধিত মাত্রায় কেতাদুরস্ত করে লিখতে চাও তাহলে তার নমুনা একটা দেওয়া যাক–