প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
আজ শরৎচন্দ্রের অভিনন্দনে বিশেষ গর্ব অনুভব করতে পারতুম যদি তাঁকে বলতে পারতুম তিনি একান্ত আমারই আবিষ্কার। কিন্তু তিনি কারো স্বাক্ষরিত অভিজ্ঞানপত্রের জন্যে অপেক্ষা করেন নি। আজ তাঁর অভিনন্দন বাংলাদেশের ঘরে ঘরে স্বত-উচ্ছ্বসিত। শুধু কথাসাহিত্যের পথে নয়, নাট্যাভিনয়ে চিত্রাভিনয়ে তাঁর প্রতিভার সংস্রবে আসবার জন্যে বাঙালির ঔৎসুক বেড়ে চলেছে। তিনি বাঙালির বেদনার কেন্দ্রে আপন বাণীর স্পর্শ দিয়েছেন।
সাহিত্যে উপদেষ্টার চেয়ে স্রষ্টার আসন অনেক উচ্চে, চিন্তাশক্তির বিতর্ক নয় কল্পনাশক্তির পূর্ণ দৃষ্টিই সাহিত্যে শাশ্বত মর্যাদা পেয়ে থাকে। কবির আসন থেকে আমি বিশেষভাবে সেই স্রষ্টা সেই দ্রষ্টা শরৎচন্দ্রকে মাল্যদান করি। তিনি শতায়ু হয়ে বাংলাসাহিত্যকে সমৃদ্ধিশালী করুন—তাঁর পাঠকের দৃষ্টিকে শিক্ষা দিন মানুষকে সত্য করে দেখতে, স্পষ্ট করে মানুষকে প্রকাশ করুন তার দোষে গুণে ভালোয় মন্দয়— চমৎকারজনক শিক্ষাজনক কোনো দৃষ্টান্তকে নয়, মানুষের চিরন্তন অভিজ্ঞতাকে প্রতিষ্ঠিত করুন তাঁর স্বচ্ছ প্রাঞ্জল ভাষায়।
পরলোকগত উদারচরিত্র মহারাজ মণীন্দ্রচন্দ্র নন্দীর সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠ পরিচয়ের যথেষ্ট সুযোগ ঘটে নি। লোকহিতকর ব্যাপারে তাঁর অকুণ্ঠিত দাক্ষিণ্যের সংবাদ সকলেই জানে, আমিও জানি। প্রত্যক্ষভাবে আমি তার একটি পরিচয়ও পেয়েছি। শান্তিনিকেতন আশ্রমের পণ্ডিত হরিচরণ বিদ্যারত্ন দীর্ঘকাল একান্ত অধ্যবসায়ে বাংলা অভিধান সংকলনে প্রবৃত্ত। এই কার্যে যাতে তিনি নিশ্চিন্ত মনে যথোচিত সময় দিতে পারেন সেই উদ্দেশে মহারাজ তাঁকে বহু বৎসর যাবৎ মাসিক অর্থসাহায্য করে এসেছেন। এই কার্যের মূল্য তিনি বুঝেছিলেন এবং এর মূল্য দিতে কিছুমাত্র দ্বিধা করেন নি। লক্ষ্মীর প্রসাদ তিনি পেয়েছিলেন। সেই প্রসাদ অজস্র বিতরণ করবার দুর্লভ শক্তি তাঁর ছিল। তাঁর সেই ভোগাসক্তিবিমুখ ভগবৎপরায়ণ নিরভিমান মহদাশয়তা বাঙালির গৌরবের কারণ রূপে স্মরণীয় হয়ে থাকেবে। ১০ অগ্রহায়ণ, ১৩৩৬
বালককালে আমার সাহস যে কত ছিল তার দুটি দৃষ্টান্ত মনে পড়ছে। মানিকতলায় রাজেন্দ্রলাল মিত্রের ঘরে আমার যাওয়া-আসা ছিল, আর তার চেয়ে স্পর্ধা প্রকাশ করেছি পটলডাঙায় বঙ্কিমচন্দ্রের সামনে যখন-তখন হঠাৎ আবির্ভূত হয়ে।
একটা কথা মনে রাখা চাই তখন যাঁরা নামজাদা ছিলেন তাঁদের কাজের জায়গা বা আরামের ঘর এখনকার মতো সকলের পক্ষেই এত সুগম ছিল না। তখন সাহিত্যে যাঁদের প্রভাব ছিল বেশি তাঁদের সংখ্যা ছিল কম, তাঁদের আমরা সমীহ ক’রে চলতুম। তখনকার গণ্য লোকেরা সকলেই রাশভারি ছিলেন ব’লে আমার মনে পড়ে। সেকালে সমাজে একটা ব্যবহারবিধি ছিল, তাই পরস্পরের মর্যাদা লঙ্ঘন সহজ ছিল না।
রাজেন্দ্রলালের প্রতি আমার আন্তরিক শ্রদ্ধা ছিল, গাম্ভীর্য ও বিনয়ে মিশ্রিত তাঁর সহজ আভিজাত্যে আমি মুগ্ধ ছিলুম। তাঁর কাছে নিজের জোরে আমি প্রশ্রয় দাবি করি নি তিনি স্নেহ করে আমাকে প্রশ্রয় দিয়েছিলেন। কথাপ্রসঙ্গে মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ