শেষরক্ষা

চন্দ্রকান্ত বিনোদ প্রভৃতির প্রবেশ

 

নিবারণ। আহার প্রস্তুত চন্দ্রবাবু, কিছু খাবেন চলুন।

চন্দ্রকান্ত। আমাদের পরে হবে, আগে সকলের হোক।

শিবচরণ। না না, একে একে সব হয়ে যাক। চলো চন্দর, তোমাদের খাইয়ে আনি গে। নিবারণ, তুমি কিছু ব্যস্ত হোয়ো না, আমি সব ঠিক করে নিচ্ছি। কিন্তু লুচিটা কিছু কম পড়বে বোধ হচ্ছে।

নিবারণ। তা হলে কী হবে শিবু!

শিবচরণ। ঐ দেখো! মিছিমিছি ভাব কেন? সে সব ঠিক হয়ে যাবে। এখন কেবল সন্দেশগুলো এসে পৌঁছলে বাঁচি। আমার তো বোধ হচ্ছে, ময়রা বেটা বায়না নিয়ে ফাঁকি দিলে।

নিবারণ। বলো কী ভাই!

শিবচরণ। ব্যস্ত হোয়ো না। আমি সব দেখে শুনে নিচ্ছি।

[ শিবচরণ ও নিবারণের প্রস্থান

চন্দ্রকান্ত। ওরে বিনু, খাবার লোভে চলেছিস বুঝি?

বিনোদ। কেন, তোমার লোভ একেবারে নেই নাকি?

চন্দ্রকান্ত। কাজ আছে যে।

বিনোদ। কাজ তো ফতে হয়ে গেছে, আবার কী?

চন্দ্রকান্ত। যে কাজ হয়ে গেছে সে তো ব্যক্তিগত। এখন লড়াই বাকি আছে হিউম্যানিটির জন্যে।

বিনোদ। বাস্‌ রে, এই অর্ধেক রাত্তিরে শেষকালে হিউম্যানিটি নিয়ে পড়তে হবে?

চন্দ্রকান্ত। হিউম্যানিটির জন্যে যত ষড়যন্ত্র সে তো অর্ধেক রাত্তিরেই।

বিনোদ। কোন্‌ দুঃসাধ্য কাজ করতে হবে বলো শুনি।

চন্দ্রকান্ত। বাসরঘরের রুদ্ধ দুর্গ আজ আমরা স্টর্ম্‌ করব।

বিনোদ। আমরা ভীরু, সামান্য পুরুষজাত মাত্র — আমাদের দ্বারা কি এত বড়ো বিপ্লব ঘটতে পারবে।

চন্দ্রকান্ত। নিজেকে ক্ষুদ্র জ্ঞান কোরো না বিনোদ! ভেবে দেখো, ত্রেতাযুগে যারা সেতুবন্ধন করেছিল জীব হিসাবে তারাও যে আমাদের চেয়ে খুব বেশি শ্রেষ্ঠ ছিল তার প্রমাণ নেই — এমন-কি, এক-আধটা বাহ্য বাহুল্য ছাড়া অনেক বিষয়েই মিল ছিল ; মহৎ লক্ষ্য হৃদয়ে রেখে তারাও হেঁটে সমুদ্র পার হল। আর, আমাদের কেবলমাত্র এই দরজাটুকু পার হতে হবে। এতকাল এই বাসরঘরের সামনে স্ত্রীপুরুষের যে বিচ্ছেদসমুদ্র বিরাজ করছে কেবল একটিমাত্র মহাবীর বরবেশে সেটা লঙ্ঘন করবার অধিকারী ; কিষ্কিন্ধ্যার বাকি সকলকেই এ পারে পড়ে থাকতে হয়, এই অগৌরব যদি আমরা মোচন করতে না পারি তা হলে ধিক্‌ আমাদের পৌরুষ!

বিনোদ। হিয়ার হিয়ার!

চন্দ্রকান্ত। এতদিন সেখানে কেবল ভুজমৃণালের শাসনই বলবান ছিল। আজ বঙ্গোপসাগরের উত্তর তীর থেকে হিমালয়ের দক্ষিণপ্রান্ত পর্যন্ত সকল পুরুষে এককণ্ঠে বলো দেখি, ‘ নাহি কে বল এ ভুজ-অর্গলে?'

বিনোদ। আছে আছে!