শেষরক্ষা

যাহা বুঝিবার শেষ হয়ে গেল বোঝা,

তবু কেন হেন সংশয়ঘনছায়ে

মনের কথাটি নীরব মনে লুকায় রে?


তৃতীয় দৃশ্য
বাসরঘরের বাহিরে
লোকারণ্য। শঙ্খ। হুলুধ্বনি। সানাই
নিবারণ ও শিবচরণ

নিবারণ। কানাই! ও কানাই! কী করি বলো দেখি! কানাই গেল কোথায়?

শিবচরণ। তুমি ব্যস্ত হোয়ো না ভাই! এ ব্যস্ত হবার কাজ নয়। আমি সব ঠিক করে দিচ্ছি। তুমি পাত পাড়া হল কি না দেখে এসো দেখি।

ভৃত্য। বাবু, আসন এসে পৌঁচেছে, সেগুলো রাখি কোথায়?

নিবারণ। এসেছে! বাঁচা গেছে। তা সেগুলো ছাতে —

শিবচরণ। ব্যস্ত হচ্ছ কেন দাদা! কী হয়েছে বলো দেখি। কী রে বেটা, তুই হাঁ করে দাঁড়িয়ে রয়েছিস কেন? কাজকর্ম কিছু হাতে নেই নাকি?

ভৃত্য। আসন এসেছে, সেগুলো রাখি কোথায় তাই জিজ্ঞাসা করছি।

শিবচরণ। আমার মাথায়! একটু গুছিয়ে-গাছিয়ে নিজের বুদ্ধিতে কাজ করা, তা তোদের দ্বারা হবে না। চল্‌, আমি দেখিয়ে দিচ্ছি। ওরে বাতিগুলো যে এখনো জ্বালালে না। এখানে কোনো কাজেরই একটা বিলিব্যবস্থা নেই — সমস্ত বেবন্দোবস্ত। নিবারণ, ভাই, তুমি একটু ঠান্ডা হয়ে বোসো দেখি — ব্যস্ত হয়ে বেড়ালে কোনো কাজই হয় না। আঃ, বেটাদের কেবল ফাঁকি! বেহারা বেটারা সব পালিয়েছে দেখছি, আচ্ছা করে তাদের কানমলা না দিলে —

নিবারণ। পালিয়েছে নাকি! কী করা যায়?

শিবচরণ। ব্যস্ত হোয়ো না ভাই — সব ঠিক হয়ে যাবে। বড়ো বড়ো ক্রিয়াকর্মের সময় মাথা ঠাণ্ডা রাখা ভারি দরকার। কিন্তু এই রেধো বেটার সঙ্গে তো আর পারি নে! আমি তাকে পইপই করে বললুম ‘ তুমি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে লুচি ভাজিয়ো ', কিন্তু কাল থেকে হতভাগা বেটার চুলের টিকি দেখবার জো নেই! লুচি যেন কিছু কম পড়েছে বোধ হচ্ছে।

নিবারণ। বলো কী শিবু! তা হলে তো সর্বনাশ!

শিবচরণ। ভয় কী দাদা! তুমি নিশ্চিন্তে থাকো, সে আমি করে নিচ্ছি। একবার রাধুর দেখা পেলে হয়, আচ্ছা করে শুনিয়ে দিতে হবে।