শেষরক্ষা

ওগো শূন্য মোজা —

মেলানো বড়ো শক্ত। এই সময়ে থাকত বিন্‌দা! —

আমার শূন্য হৃদয়ের মতো, ওগো শূন্য মোজা,

অনুপস্থিত কোন্‌ দুটি চরণ

সদাই করিতেছ খোঁজা।

কথা আসছে। কিন্তু ঘুলিয়ে যাচ্ছে —

বিনা পায়েই প্রাণের ভিতরে

চলে গিয়েছ সোজা।

আইডিয়াটা ওরিজিনাল্‌।

তিনটে লাইন হল, সাত জোড়া মোজা আছে ; ঠিক সপ্তপদীর নম্বর। আরো চারটে লাইন চাই। ( উপরতলার বারান্দার দিকে চাহিয়া) অনুদ্দেশকে উদ্দেশ করে এই লাইনগুলি আবৃত্তি করতে ইচ্ছা করছে — য়ুরোপের ট্রুবেডোরদের মতো।

(আপন মনে)      আমার শূন্য হৃদয়ের মতো, ওগো শূন্য মোজা,

অনুপস্থিত কোন্‌ দুটি চরণ সদাই করিছ খোঁজা?

কিন্তু আর তো মিল দেখছি নে, এক আছে ‘ মুসলমানের রোজা ' — মোজাকে বললে দোষ নেই যে ঈদের দিনে প্রতিপদের চাঁদ। না না, ওতে আমার লেখার ক্লাসিক্যাল গ্রেসটা চলে যাবে। তা ছাড়া দিন খারাপ, হয়তো সামান্য মোজার জন্যে শান্তিভঙ্গ হতেও পারে — ওটা থাক্‌।

নেপথ্যে। হিঁয়া রাখো।

শিবচরণের প্রবেশ

শিবচরণ। বেটার তবু হুঁশ নেই। দেখো-না, হাঁ করে দাঁড়িয়ে আছে দেখো-না। যেন খিদে পেয়েছে, এই বাড়ির ইঁটকাঠগুলো গিলে খাবে। ছোঁড়ার হল কী! খাঁচার পাখির দিকে বেড়াল যেমন তাকিয়ে থাকে তেমনি করে উপরের দিকে তাকিয়ে আছে। হতভাগা কালেজে যাবার নাম করে রোজ বাগবাজারে এসে ঘুর ঘুর করে। (নিকটে আসিয়া) বাপু, মেডিক্যাল কালেজটা কোন্‌দিকে একবার দেখিয়ে দাও দেখি!

গদাই। কী সর্বনাশ! এ যে বাবা!

শিবচরণ। শুনছ? কালেজ কোন্‌-দিকে? তোমার অ্যানাটমির নোট কি ঐ দেয়ালের গায়ে লেখা আছে? তোমার সমস্ত ডাক্তারিশাস্ত্র কি ঐ জানলায় গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলছে?

গদাই নিরুত্তর


মুখে কথা নেই যে! লক্ষ্মীছাড়া, এই তোর এক্‌জামিন! এইখানে তোর মেডিক্যাল কালেজ!

গদাই। খেয়েই কালেজে গেলে আমার অসুখ করে, তাই একটুখানি বেড়িয়ে নিয়ে —

শিবচরণ। বাগবাজারে তুমি হাওয়া খেতে এস? শহরে আর কোথাও বিশুদ্ধ বায়ু নেই! এ তোমার দার্জিলিং সিমলে পাহাড়! বাগবাজারের হাওয়া খেয়ে খেয়ে আজকাল যে চেহারা বেরিয়েছে, একবার আয়নাতে দেখা হয় কি? আমি বলি ছোঁড়াটা এক্‌জামিনের তাড়াতেই শুকিয়ে যাচ্ছে, তোমাকে যে ভূতে তাড়া করে বাগবাজারে ঘোরাচ্ছে তা তো জানতুম না!