বশীকরণ

আশু। তা চেয়েছিলেম বটে।

শ্যামা। তুমি দেখাশুনা করতে চাইলে বলেই আমি মেয়েকে তোমার সাক্ষাতে বের করলুম, তার গানও শুনলে, এখন পানপাত্রের কথা শুনেই যদি বেঁকে দাঁড়াও তা হলে তো আমার আর মুখ দেখাবার জো থাকবে না। তোমাকেই বা লোকে কী বলবে বাবা! ভদ্রলোকের মেয়ের সঙ্গে এমন ব্যবহার কি ভালো! আমার নিরু তোমার কাছে কী দোষ করেছিল যে—

ক্রন্দন

নিরুপমার দ্রুত প্রবেশ

নিরুপমা। মা, কী হয়েছে মা, অমন করে কাঁদছ কেন!

আশু। ( স্বগত) কী সর্বনাশ! আমাকে এঁরা সবাই কী মনে করবেন না-জানি! (প্রকাশ্যে) কিছুই হয় নি, আমি সমস্তই ঠিক করে দিচ্ছি। আপনারা কান্নাকাটি করবেন না। শুভকর্মে ওতে অমঙ্গল হয়। ( শ্যামার প্রতি) তা, আপনি একটা দিন স্থির করে দিন, আমার তাতে কোনো আপত্তি নেই।

শ্যামা। তা বাবা, যদি ভালো দিন হয়, তা হলে তুমি যা বলেছিলে আসছে রবিবারেই হয়ে যাক। আমার আয়োজনে কাজ নেই। এই কটা দিন তোমার মত স্থির থাকলে বাঁচি।

আশু। অমন কথা বলবেন না, আমার মতের কখনো নড়চড় হয় না।

শ্যামা। আমার পা ছুঁয়ে তো তাই বলেওছিলে, কিন্তু দশ মিনিট না যেতেই এক পানপাত্রের কথা শুনেই তোমার মত বদলে গেল।

আশু। তা বটে। পানপাত্রটা আমি আদবে পছন্দ করি না—

শ্যামা। কেন বলো তো বাবা?

আশু। তা ঠিক বলতে পারছি নে— ঐ আমার কেমন— বোধ হয়, ওটা— কী জানেন, পানপাত্রটা যেন— কে জানে ও কথাটাই কেমন— হঠাৎ শুনলে কী যেন— তা, এই বাড়িটার নম্বর কী বলুন দেখি।

শ্যামা। ওঃ, তাই বুঝি ভাবছ? আমরা তোমাকে ভাঁড়াচ্ছি নে বাবা। আমরাই উনপঞ্চাশ নম্বরে ছিলুম, কাল এই বাইশ নম্বরে উঠে এসেছি। যদি মনে কোনো সন্দেহ থাকে, উনপঞ্চাশ নম্বরে বরঞ্চ একবার খোঁজ করে আসতে পারো।

আশু। ( স্বগত) উঃ, কী ভুলই করেছি! যা হোক, এখন একটা পরিত্রাণের রাস্তা পাওয়া গেছে। অন্নদাকে এনে দিলেই সমস্ত গোল মিটে যাবে। যা হোক, অন্নদার অদৃষ্ট ভালো। এক-একবার মনে হচ্ছে, ভুলটা শেষ পর্যন্ত টেনে নিয়ে গেলে মন্দ হয় না।

শ্যামা। কী বাবা? এত ভাবছ কেন? আমরা ভদ্রঘরের মেয়ে, তোমাকে ঠকাবার জন্যে পশ্চিম থেকে এখেনে আসি নি।

আশু। ও কথা বলবেন না, আমার মনে কোনো সন্দেহ নেই। এখন আমি যাচ্ছি, এক ঘণ্টার মধ্যে ফিরে আসব, আজকের দিনের মধ্যেই একটা সন্তোষজনক বন্দোবস্ত করবই— এ আমি আপনার পা ছুঁয়ে শপথ করে যাচ্ছি।

শ্যামা। বাবা, ও শপথে কাজ নেই— পা ছুঁয়ে আরো একবার শপথ করেছিলে—

আশু। আচ্ছা, আমি আমার ইষ্টদেবতার শপথ করে যাচ্ছি, আজকের মধ্যেই সমস্ত পাকা করে তবে অন্য কথা।

শ্যামা। ( স্বগত) ছেলেটি কথাবার্তায় বেশ, কিন্তু ওকে কিছুই বুঝবার জো নেই। কখনো-বা তাড়া দেয়, কখনো-বা ঢিল দেয়, অথচ মুখ দেখে ওর প্রতি অবিশ্বাসও হয় না।

আশু। তবে অনুমতি করেন তো এখন আসি।

শ্যামা। তা, এসো বাবা।

[ প্রণাম করিয়া আশুর প্রস্থান