বশীকরণ
ওকেও তো আর রাখা যাবে না।

আশু। ওঁর বিবাহ হয়ে গেলেই বুঝি—

শ্যামা। তা হলে আবার আমি কাশীতে ফিরে যেতে পারি।

আশু। তাহলে তার আগেই আমাদের—

শ্যামা। সব ঠিক করে নিতে হবে।

আশু। তবে দিনক্ষণ দেখুন।

শ্যামা। তুমি তো রাজি আছ বাবা?

আশু। বিলক্ষণ! রাজি যদি না থাকব তো এখানে এলেম কেন! আপনাকে নিয়ে কি আমি পরিহাস করছি! আমার সেরকম স্বভাব নয়। আমি এখনকার ছেলেদের মতো এ-সকল বিষয় নিয়ে তামাশা করি নে।

শ্যামা। তোমার আর মত বদলাবে না?

আশু। কিছুতেই না। আপনার পদস্পর্শ করে আমি বলছি, আপনার কাছ থেকে যা সংগ্রহ করতে এসেছি তা আমি গ্রহণ করে তবে নিরস্ত হব।

শ্যামা। দেওয়া-থোওয়ার কথা কিছু হল না যে।

আশু। আপনি কী চান বলুন।

শ্যামা। আমি কী চাইব বাবা? তুমি কী চাও, সেইটে বলো।

আশু। আমি কেবল বিদ্যে চাই, আর কিছু চাই নে।

শ্যামা। ( স্বগত) ছেলেটি কিন্তু বেহায়া, তা বলতেই হবে! ছি ছি ছি, বিদ্যেসুন্দরের কথা আমার কাছে পাড়লে কী করে! আমার নিরুকে বলে কিনা বিদ্যে! (প্রকাশ্যে) তা হলে পানপাত্রটার কথা কী বল বাবা?

আশু। ( স্বগত) পানপাত্র! এঁর দেখছি সমস্তই শাক্তমতে। এ দিকে কুমারী কন্যা, তার পরে আবার পানপাত্র!

এইটে আমার ভালো ঠেকছে না। ( প্রকাশ্যে) তা, মাতাজি, আপনি কিছু মনে করবেন না— অবশ্য যে কাজের

যা অঙ্গ তা করতেই হয়— কিন্তু ঐ-যে পানপাত্রের কথা বললেন, ওটা তো আমার দ্বারা হবে না।

শ্যামা। বাবা, তোমরা একালের ছেলে, তোমরা ওটাকে অসভ্যতা মনে কর, কিন্তু আমি তো ওতে কোনো দোষ দেখি নে—

আশু। আপনি ওতে কোনো দোষই দেখেন না! বলেন কী মাতাজি!

শ্যামা। তা, নাহয় পানপাত্র রইল, ওর জন্যে কিছু আটকাবে না, এখন বিবাহের কথা তো পাকা?

আশু। কার বিবাহের কথা?

শ্যামা। তুমি আমাকে অবাক করলে বাপু! এতক্ষণ কথাবার্তার পর জিজ্ঞাসা করছ কার বিবাহের কথা! তোমারই তো বিবাহের কথা হচ্ছিল; কেবল পানপাত্রের কথা শুনেই তুমি চমকে উঠলে। তা, পানপাত্র নাহয় নাই হল।

আশু। ( হতবুদ্ধিভাবে) ও, হাঁ, তা বুঝেছি, তাই হচ্ছিল বটে! (স্বগত) মস্ত একটা কী ভুল হয়ে গেছে। না বুঝে একেবারে জড়িয়ে পড়েছি। কী করা যায়! (প্রকাশ্যে) কিন্তু, এত তাড়াতাড়ি কিসের, আর-এক দিন এ-সব কথা খোলসা করে আলোচনা করা যাবে। কী বলেন?

শ্যামা। খোলসার আর কী বাকি রেখেছ বাবা! আর-একদিন এর চেয়ে আর কত খোলসা হবে! তাড়াতাড়ি তো তুমিই করছিলে। আসছে রবিবারেই তুমি দিন স্থির করতে চেয়েছিলে।