চিরকুমার-সভা

পুরবালা জিনিসপত্র গুছাইতে গেল, এমন সময় নৃপবালা ও নীরবালা ঘরে প্রবেশ

করিয়াই পলায়নোদ্যত হইল নীর দরজার আড়াল হইতে আর - একবার ভালো করিয়া তাকাইয়া

মেজদিদি বলিয়া ছুটিয়া আসিল

নীরবালা। মেজদিদি, তোমাকে ভাই জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে, কিন্তু ঐ চাপকানে বাধছে। মনে হচ্ছে তুমি যেন কোন্‌ রূপকথার রাজপুত্র, তেপান্তর মাঠ পেরিয়ে আমাদের উদ্ধার করতে এসেছ।

নীরর সমুচ্চ কণ্ঠস্বরে আশ্বস্ত হইয়া নৃপও ঘরে প্রবেশ করিয়া মুগ্ধনেত্রে চাহিয়া রহিল।

 

নীরবালা। ( তাহাকে টানিয়া লইয়া ) অমন করে লোভীর মতো তাকিয়ে আছিস কেন। যা মনে করছিস তা নয়, ও তোর দুষ্মন্ত নয় — ও আমাদের মেজদিদি।

রসিক। —

ইয়মধিকমনোজ্ঞা চাপকানেনাপি তন্বী

কিমিব হি মধুরাণাং মণ্ডনং নাকৃতীনাম্‌।

 

অক্ষয়। মূঢ়ে, তোরা কেবল চাপকানটা দেখেই মুগ্ধ। গিল্‌টির এত আদর? এ দিকে যে খাঁটি সোনা দাঁড়িয়ে হাহাকার করছে।

নীরবালা। আজকাল খাঁটি সোনার দর যে বড়ো বেশি, আমাদের এই গিল্‌টিই ভালো। কী বল ভাই মেজদিদি।

শৈলর কৃত্রিম গোঁফটা একটু পাকাইয়া দিল

রসিক। ( নিজেকে দেখাইয়া ) এই খাঁটি সোনাটি খুব সস্তায় যাচ্ছে ভাই, এখনো কোনো ট্যাঁকশালে গিয়ে কোনো মহারানীর ছাপটি পর্যন্ত পড়ে নি।

নীরবালা। আচ্ছা বেশ, সেজদিদিকে দান করলুম। ( রসিকদাদার হাত ধরিয়া নৃপর হাতে সমর্পণ করিল ) রাজি আছিস তো ভাই?

নৃপবালা। তা আমি রাজি আছি।

রসিকদাদাকে একটা চৌকিতে বসাইয়া সে তাঁহার মাথার পাকা চুল তুলিয়া দিতে লাগিল

নীর শৈলর কৃত্রিম গোঁফে তা দিয়া পাকাইয়া তুলিবার চেষ্টা করিতে লাগিল

শৈলবালা। আঃ, কী করছিস, আমার গোঁফ পড়ে যাবে।

রসিক। কাজ কী, এ দিকে আয়-না ভাই, এ গোঁফ কিছুতেই পড়বে না।

নীরবালা। আবার! ফের! সেজদিদির হাতে সঁপে দিলুম কী করতে। আচ্ছা রসিকদাদা, তোমার মাথার দুটো-একটা চুল কাঁচা আছে, কিন্তু গোঁফ আগাগোড়া পাকালে কী করে।

রসিক। কারও কারও মাথা পাকবার আগে মুখটা পাকে।

অক্ষয়। তা হলে আমি একবার চিরকুমার - সভার মাথায় হাত বুলিয়ে আসি।

নীরবালা। —