প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
মন্ত্রী। মহারাজ, শিবির একেবারে শূন্য, অনেকখানি পুড়েছে। অল্প কয়জন প্রহরী ছিল, তারা তো—
রণজিৎ। তারা যেখানেই থাক্-না, অভিজিৎ কোথায় জানা চাই।
কঙ্কর। মহারাজ, যুবরাজের শাস্তি আমরা দাবি করি।
রণজিৎ। শাস্তির যে যোগ্য তার শাস্তি দিতে আমি কি তোমাদের অপেক্ষা করে থাকি?
কঙ্কর। তাঁকে খুঁজে না পেয়ে লোকের মনে সংশয় উপস্থিত হয়েছে।
রণজিৎ। কী! সংশয়! কার সম্বন্ধে?
কঙ্কর। ক্ষমা করবেন মহারাজ। প্রজাদের মনের ভাব আপনার জানা চাই। যুবরাজকে খুঁজে পেতে যতই বিলম্ব হচ্ছে ততই তাদের অধৈর্য এত বেড়ে উঠছে যে, যখন তাঁকে পাওয়া যাবে তখন তারা শাস্তির জন্যে মহারাজের অপেক্ষা করবে না।
বিভূতি। মহারাজের আদেশের অপেক্ষা না করেই নন্দিসংকটের ভাঙা দুর্গ গড়ে তোলবার ভার আমরা নিজের হাতে নিয়েছি।
রণজিৎ। আমার হাতে কেন রাখতে পারলে না?
বিভূতি। যেটা আপনারই বংশের অপকীর্তি, তাতে আপনারও গোপন সম্মতি আছে এ রকম সন্দেহ হওয়া মানুষের পক্ষে স্বাভাবিক।
মন্ত্রী। মহারাজ, আজ জনসাধারণের মন একদিকে আত্মশ্লাঘার অন্যদিকে ক্রোধে উত্তেজিত। আজ অধৈর্যের দ্বারা অধৈর্যকে উদ্দাম করে তুলবেন না।
রণজিৎ। ওখানে ও কে দাঁড়িয়ে? ধনঞ্জয় বৈরাগী?
ধনঞ্জয়। বৈরাগীটাকেও মহারাজের মনে আছে দেখছি।
রণজিৎ। যুবরাজ কোথায় তা তুমি নিশ্চিত জান।
ধনঞ্জয়। না, মহারাজ, যা আমি নিশ্চিত জানি তা চেপে রাখতে পারি নে— তাই বিপদে পড়ি।
রণজিৎ। তবে এখানে কী করছ?
ধনঞ্জয়। যুবরাজের প্রকাশের জন্যে অপেক্ষা করছি।
নেপথ্যে। সুমন, বাবা সুমন! অন্ধকার হয়ে এল, সব অন্ধকার হয়ে এল।
রাজা। ও কে ও?
মন্ত্রী। সেই অম্বা পাগলি।
অম্বা। কই, সে তো ফিরল না।
রণজিৎ। কেন খুঁজছ তাকে? সময় হয়েছিল, ভৈরব তাকে ডেকে নিয়েছেন।
অম্বা। ভৈরব কি কেবল ডেকেই নেন? ভৈরব কি কখনো ফিরিয়ে দেন না? চুপিচুপি? গভীর রাত্রে? সুমন, সুমন!
চর। শিবতরাই থেকে হাজার হাজার লোক চলে আসছে।
বিভূতি। সে কি কথা? আমরা হঠাৎ গিয়ে তাদের নিরস্ত্র করব এই তো ঠিক ছিল। নিশ্চয় তোমাদের কোনো বিশ্বাসঘাতক তাদের খবর দিয়েছে। কঙ্কর, তোমরা কয়জন ছাড়া ভিতরের কথা কেউ তো জানে না। তাহলে কী করে—
কঙ্কর। কী বিভূতি! আমাদেরও সন্দেহ কর না কি?
বিভূতি। সন্দেহ করার সীমা কোথাও নেই।
কঙ্কর। তা হলে আমরাও তোমাকে সন্দেহ করি।
বিভূতি। সে অধিকার তোমাদের আছে। যাই হোক, সময় হলে এর একটা বোঝাপড়া করতে হবে।
রণজিৎ। (চরের প্রতি) তারা কী অভিপ্রায়ে আসছে তুমি জান?
চর। তারা শুনেছে—যুবরাজ বন্দী হয়েছেন, তাই পণ করেছে তাঁকে খুঁজে বের করবে। এখান থেকে মুক্ত করে তাঁকে ওরা শিবতরাইয়ের রাজা করতে চায়।
বিভূতি। আমরাও খুঁজছি যুবরাজকে, আর ওরাও খুঁজছে, দেখি কার হাতে পড়েন।
ধনঞ্জয়। তোমাদের দুই দলেরই হাতে পড়বেন, তাঁর মনে পক্ষপাত নেই।
চর। ওই যে আসছে শিবতরাইয়ের গণেশ সর্দার।