প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
নিতান্ত কাছাকাছি—
তোমার মোহিনীশক্তি দাও আমারে
হৃদয়প্রাণ-হরা॥
মা। যেমন বলেছিলেম তেমনি প্রস্তুত হয়েছ তো?
প্রকৃতি। হয়েছি! কাল ছিল শুক্লাদ্বিতীয়ার রাত, করেছি গম্ভীরায় অবগাহন স্নান। এই তো চাল দিয়ে, দাড়িমের ফুল দিয়ে, সিঁদুর দিয়ে, সাতটি রত্ন দিয়ে, চক্র এঁকেছি আঙিনায়। পুঁতেছি হলদে কাপড়ের ধ্বজাগুলি, থালায় রেখেছি মালাচন্দন, জ্বালিয়েছি বাতি। স্নানের পর কাপড় পরেছি ধানের অঙ্কুরের রঙ, চাঁপার রঙের ওড়না। পুব দিকে আসন করে সমস্ত রাত ধ্যান করেছি তাঁর মূর্তি। ষোলোটি সোনালি সুতোয় ষোলোটি গ্রনিথ দিয়ে রাখী পরেছি বাঁ হাতে।
মা। আচ্ছা, তবে নাচো তোমার সেই আহ্বানের নাচ— প্রদক্ষিণ করো। আমি বেদীর কাছে মন্ত্র পড়ছি।
প্রকৃতি। গান
মম রুদ্ধ মুকূলদলে এসো।
সৌরভ-অমৃতে।
মম অখ্যাত তিমিরতলে এসো
গৌরবনিশীথে।
এই মূল্যহারা মম শুক্তি,
এসো মুক্তাকণায় তুমি মুক্তি।
মম মৌনী বীণার তারে তারে
এসো সংগীতে।
নব-অরুণের এসো আহ্বান—
চিররজনীর হোক অবসান, এসো।
এসো শুভস্মিত শুকতারায়,
এসো শিশির-অশ্রুধারায়,
সিন্দূর পরাও উষারে
তব রশ্মিতে॥
মা। প্রকৃতি, এইবার তোমার আয়নাটা নিয়ে দেখো। দেখছ—কালো ছায়া পড়েছে বেদীটার উপরে? আমার বুক ভেঙে যাচ্ছে, পারছি নে। দেখো আয়নাটা— আর কত দেরি।
প্রকৃতি। না, দেখব না, দেখব না, আমি শুনব মনের মধ্যে— ধ্যানের মধ্যে। হঠাৎ সামনে দেখব যদি দেখা দেন। আর-একটু সয়ে থাকো, মা— দেবেন দেখা, নিশ্চয় দেবেন। ঐ দেখো, হঠাৎ এল ঝড়, আগমনীর ঝড়, পদভরে পৃথিবী কাঁপছে থর্থরিয়ে, বুক উঠছে গুর্গুর্ করে।
মা। আনছে তোর অভিশাপ হতভাগিনী। আমাকে তো মেরে ফেললে! ছিঁড়ল বুঝি শিরাগুলো।
প্রকৃতি। অভিশাপ নয়, অভিশাপ নয়, আনছে আমার জন্মান্তর, মরণের সিংহদ্বার খুলছে, বজ্রের হাতুড়ি মেরে। ভাঙল দরজা, ভাঙল প্রাচীর, ভাঙল আমার এ জন্মের সমস্ত মিথ্যে। ভয়ে কাঁপছে আমার মন, আনন্দে দুলছে আমার প্রাণ। ও আমার সর্বনাশ, ও