চণ্ডালিকা
প্রথম দৃশ্য

মা। প্রকৃতি, ও প্রকৃতি! গেল কোথায়! কী জানি কী হল মেয়েটার। ঘরে দেখতেই পাই নে।

প্রকৃতি। এই-যে, মা, এখানেই আছি।

মা। কোথায়!

প্রকৃতি। এই-যে কুয়োতলায়।

মা। আশ্চর্য করলি তুই। বেলা গেল দুপুর পেরিয়ে, কাঠফাটা রোদ, মাটি উঠেছে তেতে, পা ফেলা যায় না। ঘরের জল কোন্‌ সকালে তোলা হয়ে গেছে। পাড়ার মেয়েরা সবাই জল নিয়ে গেল ঘরে। ঐ দেখ্‌, ঠোঁট মেলে গরমে কাক ধুঁকছে আমলকীগাছের ডালে। তুই এই বৈশেখের রোদ পোয়াচ্ছিস বিনি কাজে। পুরাণকথা শুনেছি, উমা তপ করেছিলেন ঘর ছেড়ে বাইরে, রোদে পুড়ে; তোর কি তাই হল?

প্রকৃতি। হাঁ, মা, তপ করছি তো বটে।

মা। অবাক করলে! কার জন্যে।

প্রকৃতি। যে আমাকে ডাক দিয়েছে।

গান
যে আমারে দিয়েছে ডাক, দিয়েছে ডাক,
বচনহারা আমাকে যে দিয়েছে বাক্‌।
     যে আমারি নাম জেনেছে ওগো তারি
        নামখানি মোর হৃদয়ে থাক্‌॥

মা। কিসের ডাক?

প্রকৃতি। আমার মনের মধ্যে বাজিয়ে দিয়ে গেছে ‘জল দাও’।

মা। পোড়া কপাল! তোকে বলেছে ‘জল দাও’! কে শুনি। তোর আপন জাতের কেউ?

প্রকৃতি। তাই তো বললেন, তিনি আমার আপন জাতেরই।

মা। জাত লুকোস নি? বলেছিলি যে তুই চণ্ডালিনী?

প্রকৃতি। বলেছিলেম। তিনি বললেন, মিথ্যে কথা। তিনি বললেন, শ্রাবণের কালো মেঘকে চণ্ডাল নাম দিলেই বা কী, তাতে তার জাত বদলায় না, তার জলের ঘোচে না গুণ। তিনি বললেন, নিন্দে কোরো না নিজেকে। আত্মনিন্দা পাপ, আত্মহত্যার চেয়ে বেশি।

মা। তোর মুখে এ-সব কী শুনছি। তোর কি মনে পড়েছে পূর্বজন্মের কোনো কাহিনী।

প্রকৃতি। এ কাহিনী আমার নতুন জন্মের।

মা। হাসালি তুই। নতুন জন্ম! ঘটল কবে।

প্রকৃতি। সেদিন রাজবাড়িতে বাজল বেলা-দুপুরের ঘণ্টা, ঝাঁ ঝাঁ করছে রোদ্‌দুর। মা-মরা বাছুরটাকে নাওয়াচ্ছিলুম কুয়োর