তপতী

নরেশ। আমি বলতে এসেছি জালন্ধর কাশ্মীর জয় করে নি।

বিপাশা। কবে তোমার ভুল ভাঙল।

নরেশ। প্রতিদিনই ভাঙছে। প্রতিদিনই প্রমাণ পাচ্ছি, কাশ্মীরই জালন্ধর জয় করেছে। হার মানলুম। এখন প্রসন্ন হও।

বিপাশা। তার সময় আসে নি।

নরেশ। কবে আসবে।

বিপাশা। যখন আর একবার তোমরা সৈন্য নিয়ে কাশ্মীরে যুদ্ধ করতে যাবে।

নরেশ। যাব যুদ্ধ করতে, চেষ্টা করে হেরেও আসব।

বিপাশা। চেষ্টা করতে হবে না, বীরপুরুষ। সেই যুদ্ধটা না দেখে আমি যেন না মরি। ছলনাকে গৌরব বলে অহংকার করছ, সেইটে চূর্ণ হবে তবেই ধর্ম আছেন এ কথা মানব।

নরেশ। সত্য বলছি, সেই গৌরবকে ফেলে দিতে পারলে বাঁচি।

বিপাশা। কেন বলো তো।

নরেশ। কেননা, সেই গৌরবটার চেয়ে অনেক বেশি মূল্যের জিনিস দেখেছি।

বিপাশা। রানী সুমিত্রাকে দেখেছ।

নরেশ। তাঁর কথা বলা বাহুল্য। আমি বলছিলুম—

বিপাশা। আর কিছু বলতে হবে না। তাঁর চেয়ে বড়ো কথা তোমাদের রাজ্যে আর নেই। তোমাদের রাজা কি তাঁর নাগাল পায়। চুপ করে রইলে যে? লজ্জা আছে দেখছি। স্বীকার করোই-না।

নরেশ। স্বীকার অনেকদিন করেছি। কুক্ষণে মহারাজ কাশ্মীর জয় করতে গিয়েছিলেন। জয় করে তাঁর নিজের রাজ্য হারিয়েছেন। কাশ্মীর থেকে পাপগ্রহকে অভ্যর্থনা করে এনেছেন রাজ্যের মধ্যে, পাপের নৈবেদ্যে তাকেই পুষ্ট করে তুলেছেন। বিপাশা, তোমার কাছে গোপন করব না— বিপদের জাল চারি দিকে ঘিরে আসছে, গ্রন্থির পর গ্রন্থি, তারই মাঝখানে নিশ্চিন্ত বসে আছেন আমাদের স্বেচ্ছান্ধ মহারাজ, প্রস্তুত হতে হবে আমাদেরই, আর সময় নেই।

বিপাশা। অতএব?

নরেশ। অতএব এই বেলা তোমার মুখে একটা গান শুনে নিতে চাই।

বিপাশা। আমার গান, বিপদের ভূমিকায়!

নরেশ। বাঁশির স্বরে সাপের জড়তা ঘোচে, তোমার গানে আমার তরবারি জেগে উঠবে।

বিপাশা। যুদ্ধের গান চাই?

নরেশ। না, সে-গান আমার অস্থিমজ্জায় আছে, আমি ক্ষত্রিয়।

বিপাশা। তবে?

নরেশ। তুমি জান কোন্‌ গানটা আমি ভালোবাসি।

বিপাশা। উৎসবের সময় তো গাইতেই হবে, তখন শুনো।

নরেশ। যা সকলেই পাবে তাতে আমার কেবল একটা মাত্র ভাগ। একটি সম্পূর্ণ দান আমাকে দাও, যা কেবল আমার একলারই।