অরূপরতন
     ওগো নব প্রভাতজ্যোতি,
     ওগো চিরদিনের গতি,
            নব আশার লহ নমস্কার॥
                  জীবনরথের হে সারথি,
                  আমি নিত্য পথের পথী,
                       পথে চলার লহ নমস্কার॥


সুদর্শনার প্রবেশ

সুদর্শনা। বেঁচেছি, বেঁচেছি সুরঙ্গমা। হার মেনে তবে বেঁচেছি। ওরে বাস রে। কী কঠিন অভিমান। কিছুতেই গলতে চায় না। আমার রাজা কেন আমার কাছে আসতে যাবে – আমিই তার কাছে যাব, এই কথাটা কোনোমতেই মনকে বলাতে পারছিলুম না। সমস্ত রাতটা পথে পড়ে ধুলোয় লুটিয়ে কেঁদেছি – দক্ষিনে হাওয়া বুকের বেদনার মতো হু হু করে বয়েছে, আর কৃষ্ণচতুর্দশীর অন্ধকারে বউ-কথা-কও চার পহর রাত কেবলই ডেকেছে – সে যেন অন্ধকারের কান্না!

সুরঙ্গমা। আহা কালকের রাতটা মনে হয়েছিল যেন কিছুতেই আর পোহাতে চায় না।

সুদর্শনা। কিন্তু বললে বিশ্বাস করবি নে, তারই মধ্যে বার বার আমার মনে হচ্ছিল কোথায় যেন তার বীণা বাজছে। যে নিষ্ঠুর, তার কঠিন হাতে কি অমন মিনতির সুর বাজে? বাইরের লোক আমার অসম্মানটাই দেখে গেল – কিন্তু গোপন রাত্রের সেই সুরটা কেবল আমার হৃদয় ছাড়া আর তো কেউ শুনল না। সে বীণা তুই কি শুনেছিলি সুরঙ্গমা। না, সে আমার স্বপ্ন?

সুরঙ্গমা। সেই বীণা শুনব বলেই তো তোমার কাছে কাছে আছি। অভিমান-গলানো সুর বাজবে জেনেই কান পেতে পড়ে ছিলুম।

[উভয়ের প্রস্থান
গানের দলের প্রবেশ
গান
আমার     অভিমানের বদলে আজ
                          নেব তোমার মালা।
আজ       নিশিশেষে শেষ করে দিই
                          চোখের জলের পালা॥
আমার     কঠিন হৃদয়টারে
ফেলে      দিলেম পথের ধারে,
তোমার     চরণ দেবে তারে মধুর
                   পরশ পাষাণ-গালা॥
ছিল        আমার আঁধারখানি,
তারে       তুমিই নিলে টানি,
তোমার     প্রেম এল যে আগুন হয়ে
                   করল তারে আলা।