অরূপরতন

ঠাকুরদা। ওই তো তার স্বভাব।

বিক্রম। তার পরে আর নিজের দেখা নেই।

ঠাকুরদা। সেও তার এক কৌতুক।

বিক্রম। কিন্তু আমাকে এমন করে আর কতদিন এড়াবে? যখন কিছুতেই তাকে রাজা বলে মানতেই চাই নি তখন কোথা থেকে কালবৈশাখীর মতো এসে এক মুহূর্তে আমার ধ্বজা পতাকা ভেঙে উড়িয়ে ছারখার করে দিলে আর আজ তার কাছে হার মানবার জন্যে পথে ঘুরে বেড়াচ্ছি, তার আর দেখাই নেই।

ঠাকুরদা। তা হোক, সে যতবড়ো রাজাই হোক হার-মানার কাছে তাকে হার মানতেই হবে। কিন্তু রাজন, রাত্রে বেরিয়েছ যে।

বিক্রম। ঐ লজ্জাটুকু এখনও ছাড়তে পারি নি। রাজা বিক্রম থালায় মুকুট সাজিয়ে তোমার রাজার মন্দির খুঁজে বেড়াচ্ছে, এই যদি দিনের আলোয় লোকে দেখে তাহলে যে তারা হাসবে।

ঠাকুরদা। লোকের ঐ দশা বটে। যা দেখে চোখ দিয়ে জল বেরিয়ে যায় তাই দেখেই বাঁদররা হাসে।

বিক্রম। কিন্তু ঠাকুরদা, তুমিও পথে যে?

ঠাকুরদা। আমিও সর্বনাশের পথ চেয়ে আছি।

গান
আমার    সকল নিয়ে বসে আছি
          সর্বনাশের আশায়।
আমি     তার লাগি পথ চেয়ে আছি
          পথে যে জন ভাসায়॥

বিক্রম। কিন্তু ঠাকুরদা, যে ধরা দেবে না তার কাছে ধরা দিয়ে লাভ কী বলো।

ঠাকুরদা। তার কাছে ধরা দিলে এক সঙ্গেই ধরাও দেওয়া হয় ছাড়াও পাওয়া যায়।

যে জন দেয় না দেখা— যায় যে দেখে
         ভালোবাসে আড়াল থেকে,
আমার    মন মজেছে সেই গভীরের
                  গোপন ভালোবাসায়॥
[উভয়ের প্রস্থান
সুরঙ্গমার প্রবেশ
গান
পথের সাথি, নমি বারংবার।
     পথিক জনের লহো নমস্কার॥
            ওগো বিদায়, ওগো ক্ষতি
            ওগো দিনশেষের পতি,
                  ভাঙা-বাসার লহো নমস্কার॥