অরূপরতন
সেই        যে আমার কাছে আমি
ছিল        সবার চেয়ে দামি
তারে        উজাড় করে সাজিয়ে দিলেম
                   তোমার বরণডাল॥
[প্রস্থান
সুদর্শনা ও সুরঙ্গমার পুনঃপ্রবেশ

সুদর্শনা। তার পণটাই রইল – পথে বের করলে তবে ছাড়লে! মিলন হলে এই কথাটাই তাকে বলব যে, আমিই এসেছি, তোমার আসার অপেক্ষা করি নি। বলব চোখের জল ফেলতে ফেলতে এসেছি – কঠিন পথ ভাঙতে ভাঙতে এসেছি। এ গর্ব আমি ছাড়ব না।

সুরঙ্গমা। কিন্তু সে গর্বও তোমার টিকবে না। সে যে তোমারও আগে এসেছিল নইলে তোমাকে বার করে কার সাধ্য।

সুদর্শনা। তা হয়তো এসেছিল – আভাস পেয়েছিলুম কিন্তু বিশ্বাস করতে পারি নি। যতক্ষণ অভিমান করে বসে ছিলুম ততক্ষণ মনে হয়েছিল সেও আমাকে ছেড়ে গিয়েছে – অভিমান ভাসিয়ে দিয়ে যখনই রাস্তায় বেরিয়ে পড়লুম তখনই মনে হল সেও বেরিয়ে এসেছে, রাস্তা থেকেই তাকে পাওয়া শুরু করেছি। এখন আমার মনে আর কোনো ভাবনা নেই। তার জন্যে এত যে দুঃখ এই দুঃখই আমাকে তার সঙ্গ দিচ্ছে। এত কষ্টের রাস্তা আমার পায়ের তলায় যেন সুরে সুরে বেজে উঠছে। এ যেন আমার বীণা, আমার দুঃখের বীণা; এরই বেদনার গানে তিনি এই কঠিন পাথরে এই শুকনো ধুলোয়, আপনি বেরিয়ে এসেছেন। আমার হাত ধরেছেন। সেই আমার অন্ধকারের মধ্যে যেমন করে হাত ধরতেন, হঠাৎ চমকে উঠে গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠত, এও সেইরকম। কে বললে, তিনি নেই, সুরঙ্গমা, তুই কি বুঝতে পারছিস নে তিনি লুকিয়ে এসেছেন?


সুরঙ্গমার গান
আমার     আর হবে না দেরি,
আমি      শুনেছি ওই বাজে তোমার ভেরী॥
                  তুমি কি নাথ দাঁড়িয়ে আছ
                      আমার যাবার পথে,
                  মনে হয় যে ক্ষণে ক্ষণে
                      মোর বাতায়ন হতে
                      তোমায় যেন হেরি॥
আমার     স্বপন হল সারা
এখন      প্রাণে বীণা বাজায় ভোরের তারা।
                  দেবার মতো যা ছিল মোর
                      নাই কিছু আর হাতে,
                  তোমার আশীর্বাদের মালা
                      নেব কেবল মাথে
                      আমার ললাট ঘেরি॥