প্রায়শ্চিত্ত

বসন্ত রায়। না সাহেব, তোমার দোষ কী। তোমার কোনো দোষ নেই। প্রতাপকে বলো, এই পাপে তার প্রয়োজন ছিল না— আমি আর কতদিনই বা বাঁচতুম। আমি মরতে ভয় করি নে। কিন্তু এইখানেই পাপের শান্তি হোক শান্তি হোক— আর নয়। উদয়কে যেন— খাঁসাহেব, কী আর বলব— ঈশ্বর যা করেন তাই হবে-আমাদের কেবল কান্নাই সার।


প্রতাপাদিত্যের কক্ষ
বন্দীভাবে উদয়াদিত্য

প্রতাপাদিত্য। কোন্‌ শাস্তি তোমার উপযুক্ত?

উদয়াদিত্য। আপনি যা আদেশ করেন।

প্রতাপাদিত্য। তুমি আমার এ রাজ্যের যোগ্য নও।

উদয়াদিত্য। না মহারাজ, আমি যোগ্য নই। আপনার এই সিংহাসন হতে আমাকে অব্যাহতি দিন এই ভিক্ষা।

প্রতাপাদিত্য। তুমি যা বলছ তা যে সত্যই তোমার হৃদয়ের ভাব তা কী করে জানব?

উদয়াদিত্য। আজ আমি মা কালীর চরণ স্পর্শ করে শপথ করব— আপনার রাজ্যের সূচ্যগ্র ভূমিও আমি কখনো শাসন করব না, সমরাদিত্যই আপনার রাজ্যের উত্তরাধিকারী।

প্রতাপাদিত্য। তুমি তবে কী চাও?

উদয়াদিত্য। মহারাজ, আমি আর কিছুই চাই নে— কেবল আমাকে পিঞ্জরের পশুর মতো গারদে পুরে রাখবেন না। আমাকে সম্পূর্ণ পরিত্যাগ করুন, আমি একাকী কাশী চলে যাই।

প্রতাপাদিত্য। আচ্ছা, বেশ। আমি এর ব্যবস্থা করছি।

উদয়াদিত্য। আমার আর-একটি প্রার্থনা আছে মহারাজ। আমি বিভাকে নিজে তার শ্বশুরবাড়ি পৌছে দিয়ে আসবার অনুমতি চাই।

প্রতাপাদিত্য। তার আবার শ্বশুরবাড়ি কোথায়?

উদয়াদিত্য। তাই যদি মনে করেন তবে সেই অনাথা কন্যাকে আমার কাছে থাকবার অনুমতি দিন। এখানে তো তার সুখও নেই কর্মও নেই।

প্রতাপাদিত্য। তার মাতার কাছে অনুমতি নিতে পার।

উদয়াদিত্য। তাঁর অনুমতি নিয়েছি।

মহিষী ও বিভার প্রবেশ

মহিষী। বাবা উদয়, তবে কি তুই কাশী যাওয়াই স্থির করলি? আমাকেও তোর সঙ্গে নিয়ে চল্‌।

[ প্রতাপের প্রস্থান

(সরোদনে) বাছা এই বয়সে তুই যদি সংসার ছেড়ে গেলি, আমি কোন্‌ প্রাণে সংসার নিয়ে থাকব? রাজ্য-সংসার পরিত্যাগ করে তুই সন্ন্যাসী হয়ে থাকবি— আর আমার মুখে এই রাজবাড়ির অন্ন যে বিষের মতো ঠেকবে!