শোধবোধ

সতীশ। তাড়া দিচ্ছ কেন — আমার তো আপিস নেই।

নলিনী। চুপ চুপ, কথা কোয়ো না, খাও। আরেকটু খাও। এই নাও।

সতীশ। আর পারছি নে — আমার হয়েছে। আমার খাবার রুচি চলে গেছে।

নলিনী। আচ্ছা, তা হলে এসো — শোনো। তোমাকে দরজা পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দিই।

সতীশ। আমার এমন সৌভাগ্য তো আর কখনো —

নলিনী। চুপ চুপ। চলে এসো।

[ উভয়ের প্রস্থান
লাহিড়ি ও লাহিড়ি-জায়ার প্রবেশ

লাহিড়ি-জায়া। সতীশের বাপ হঠাৎ মারা গেছে?

লাহিড়ি। হাঁ।

জায়া। কে যে বললে সমস্ত সম্পত্তি অনাথ-আশ্রমে দিয়ে গেছে, কেবল সতীশের মা’র জন্য জীবিতকাল পর্যন্ত ৭৫ টাকা মাসহারা বরাদ্দ। এখন কী করা যায়!

লাহিড়ি। এত ভাবনা কেন তোমার।

জায়া। বেশ লোক যা হোক তুমি। তোমার মেয়ে যে সতীশকে ভালোবাসে, সেটা বুঝি তুমি দুই চক্ষু খেয়ে দেখতে পাও না। তোমার নেলি এ দিকে লঙ্কার ধোঁয়া দিয়ে নন্দীকে দেশছাড়া করে দিয়েছে। নন্দী তো ভয়ে ওর কাছেই ঘেঁষতে চায় না। জানো বোধ হয় চারুর সঙ্গে সে এন্‌‍গেজ্‌ড্‌।

লাহিড়ি। সেদিন টেনিস্‌‍কোর্টেই সেটা বোঝা গিয়েছিল।

জায়া। এখন উপায় কী করবে।

লাহিড়ি। আমি তো মন্মথর টাকার উপর কোনোদিন নির্ভর করি নি।

জায়া। তবে কি ছেলেটির উপর নির্ভর করে বসেছিলে। অন্নবস্ত্রটা বুঝি অনাবশ্যক?

লাহিড়ি। সম্পূর্ণ আবশ্যক। সতীশের একটি মেসো আছে বোধ হয় জান।

জায়া। মেসো তো ঢের লোকেরই থাকে; তাতে ক্ষুধাশান্তি হয় না।

লাহিড়ি। এই মেসোটি আমার মক্কেল — অগাধ টাকা। ছেলেপুলে কিছুই নেই — বয়সও নিতান্ত অল্প নয়। সে তো সতীশকেই পোষ্যপুত্র নিতে চায়।

জায়া। মেসোটি তো ভালো। তা চটপট নিক্‌-না। তুমি একটু তাড়া দাও-না।

লাহিড়ি। তাড়া আমাকে দিতে হবে না, তার ঘরের মধ্যেই তাড়া দেবার লোক আছে। সবই প্রায় ঠিকঠাক, এখন কেবল একটা আইনের খটকা উঠেছে — এক ছেলেকে পোষ্যপুত্র লওয়া যায় কি না — তা ছাড়া সতীশের আবার বয়স হয়ে গেছে।

জায়া। আইন তো তোমাদেরই হাতে — তোমরা চোখ বুজে একটা বিধান দিয়ে দাও-না।

লাহিড়ি। ব্যস্ত হোয়ো না — পোষ্যপুত্র না নিলেও অন্য উপায় আছে।

জায়া। আমাকে বাঁচালে। আমি ভাবছিলেম সম্বন্ধ ভাঙি কী করে। আবার আমাদের নেলি যে-রকম জেদালো মেয়ে, সে যে কী করে বসত বলা যায় না। কিন্তু তাই বলে গরিবের হাতে তো মেয়ে দেওয়া যায় না। ঐ দেখো, তোমার মেয়ে কেঁদে চোখ ফুলিয়েছে।

লাহিড়ি। কিন্তু নেলি যে সতীশকে ভালোবাসে, সে তো দেখে মনে হয় না। ও তো সতীশকে নাকের জলে চোখের জলে