শোধবোধ
নলিনী ও সতীশের প্রবেশ

নলিনী। যথেষ্ট হয়েছে সতীশ, আজ যদি মিষ্টি কথা বলবার চেষ্টা কর তা হলে কিন্তু রসভঙ্গ হবে।

সতীশ। আচ্ছা, আমাকে যদি একেবারে চুপ করিয়ে রাখতে চাও, তা হলে ঐ গানটা আমাকে শোনাও।

নলিনী। কোন্‌টা।

সতীশ। সেই যে — উজাড় করে দাও হে আমার সকল সম্বল।

নলিনীর গান
উজাড় করে লও হে আমার সকল সম্বল।
শুধু        ফিরে চাও ফিরে চাও ওহে চঞ্চল।
চৈত্ররাতের বেলায়
নাহয়     এক প্রহরের খেলায়
আমার       স্বপনস্বরূপিণী প্রাণে দাও পেতে অঞ্চল।
যদি       এই ছিল গো মনে,
যদি        পরমদিনের স্মরণ ঘুচাও চরম অযতনে,
তবে     ভাঙা খেলার ঘরে
নাহয়     দাঁড়াও ক্ষণেক তরে,
ধুলায় ধুলায় ছড়াও হেলায় ছিন্ন ফুলের দল।


লাহিড়িসাহেবের প্রবেশ

লাহিড়ি। নেলি, এই দিকে এসো। শুনে যাও। (জনান্তিকে) সতীশের বাপ মারা গেছেন।

নলিনী। সে কী কথা।

লাহিড়ি। মাদ্রাজে। সেও আজ তিন দিন হল। হার্টের উইক্‌নেস থেকে।

নলিনী। সতীশ জানে না?

লাহিড়ি। না — মন্মথ বাড়ির লোককে কাছে ডাকতে মানা করেছিলেন। সেখানে ওঁর বাড়ির ঠিকানাও কেউ জানত না। দৈবাৎ পুজোর ছুটিতে একজন বাঙালি উকিল সেখানে ছিল, মৃত্যুশয্যায় সেই তাঁর উইল তৈরি করেছে। সে আজ এসে পৌঁচেছে। আমাকে সে জানে — আমার কাছেই প্রথম এসেছিল, আমি মন্মথর বাড়িতে তাকে এইমাত্র রওনা করে দিলুম। তুমি সতীশকে শীঘ্র সেখানে পাঠিয়ে দাও।

[প্রস্থান

নলিনী। সতীশ, চা পড়ে রয়েছে, খেয়ে নাও।

সতীশ। আমার ইচ্ছে করছে না।

নলিনী। আমার কথা শোনো, শুধু চা নয়, কিছু খাও। এই নাও রুটি।

সতীশ। মনে রেখো নেলি, গরিব বলেই আমার দানের দাম অনেক বেশি।

নলিনী। দেখো, ও-কথা আজ থাক্‌। কাল হবে। এখন তুমি খেয়ে নাও।