প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
নলিনী। যে-মাটির গর্ভে হীরে থাকে, যে-মাটির বুকে ভুঁইচাঁপা ফুল ফোটে, সেই মাটির হাতে ওকে সমর্পণ করে দিয়েছি। এর চেয়ে আর কত সম্মান হবে?
চারু। ছি ছি, নেলি, মিস্টার নন্দী জানতে পারলে কী মনে করবেন। এ যে একেবারে ছিঁড়ে ফেলেছিস।
নলিনী। ইচ্ছে করিস তো তোর ঘরের আটা দিয়ে তুই জোড়া দিয়ে নিতে পারিস।
সতীশ। মা, কোনোমতে টাকাটা পেয়েছি, নেক্লেসও নেলির ওখানে পাঠিয়ে দিয়েছি। কিন্তু বাবার সেকালের আমলের সোনার গুড়গুড়িটা সিদুঁরেপটির মতি পালদের ওখানে যে বাঁধা রেখে এলুম, নিশ্চিন্তি হতে পারছি নে।
বিধুমুখী। তোর কোনো ভয় নেই, সতীশ। তিনি এ-সব জিনিসের ’পরে কোনো মমতাই রাখেন না। কেবল ওঁর ঠাকুরদাদার জিনিস বলেই আজ পর্যন্ত লোহার সিন্দুকে ছিল। একদিনের জন্যে খবরও রাখেন নি। সেটা আছে কি গেছে, সে তাঁর মনেও নেই।
সতীশ। সে আমি জানি। কিন্তু ভারি ভয় হচ্ছে, যারা বন্ধক রেখেছে তারা হয়তো বাবাকে চিঠি লিখে খোঁজ করবে। তুমি কোনোমতে তোমার গহনাপত্র দিয়ে সেটা খালাস করে দাও।
বিধুমুখী। হায় রে কপাল, গহনাপত্র কিছু কি বাকি আছে। সে কথা আর জিজ্ঞাসা করিস নে। যাই হোক, আমি ভয় করি নে — প্রজাপতির আশীর্বাদে নলিনীর সঙ্গে আগে তোর কোনোমতে বিয়ে হয়ে যাক, তার পরে তোর বাবা যা বলেন, যা করেন, সব সহ্য হবে। কথাবার্তা কিছু এগিয়েছে?
সতীশ। সর্বদা যে-রকম লোক ঘিরে থাকে, কথা কব কখন্। জান তো সেই নন্দী — সে যেন বিলিতি কাঁটাগাছের বেড়া। তার বুলিগুলো সর্বাঙ্গে বিঁধতে থাকে। সেই দৈত্যটার হাত থেকে রাজকন্যার উদ্ধার করি কী উপায়ে।
বিধুমুখী। আমি মেয়েমানুষ, মেয়ের মন বুঝতে পারি — মনে মনে সে তোকে ভালোবাসে।
সতীশ। সে আমি জানি নে। কিন্তু বরুণ নন্দীর সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে প্রাণ বেরিয়ে গেল। বাবা একটু দয়া করলেই কোনো ভাবনা ছিল না। কিন্তু —
বিধুমুখী। তোর কী চাই বল্-না।
সতীশ। ভালো বিলিতি সুট। চাঁদনির কাপড় পরলেই ভরসা কমে যায়; নন্দীর মতো করে সজোরে নলিনীর সঙ্গে কথাই কইতে পারি নে। বাড়িসুদ্ধ সব্বাই আমার দিকে এমন করে তাকায় যেন আমার গায়ে কাপড়ই নেই, আছে নর্দমার পাঁক।
বিধুমুখী। আমি তোর কাপড়ের দুর্দশা তোর মাসিকে আভাসে জানিয়ে রেখেছি। আজ এখনই তাঁর আসবার কথা। আজই হয়তো একটা কিনারা হয়ে যাবে।
সতীশ। ঐ যে মেসোমশায়কে নিয়েই তিনি আসছেন মা, যেমন করে পার আজই যেন — কিন্তু মা, সেই গুড়গুড়ি — বাবা যদি জানতে পারেন, মেরে ফেলবেন।
বিধুমুখী। আমি বলি কী — কোনো ছুতোয় সেই নেক্লেসটা যদি নলিনীর কাছ থেকে —
সতীশ। সে কথাও ভেবেছি। তা হলেই আমার লজ্জা পুরো হয়। এক-একবার মনে করি, সংসারে যত মুশকিল সব আমারই? বরুণ নন্দীর বাপ কি কোনোকালে ছিল না। যে-রকম দেখছি, একটা কোনো গল্প বলে নেক্লেসটা ফিরিয়ে আনতে হবে, তার পরে