প্রায়শ্চিত্ত

প্রতাপাদিত্য। ( দাঁড়াইয়া উঠিয়া) পরিত্যাগ করে গেছে, প্রহরীরা গেল কোথা?

মন্ত্রী। বহির্দ্বারের প্রহরীরা পালিয়ে গেছে।

প্রতাপাদিত্য। ( মুষ্টি বদ্ধ করিয়া) পালিয়ে গেছে? পালাবে কোথায়? যেখানে থাকে তাদের খুঁজে আনতে হবে। অন্তঃপুরের প্রহরীদের এখনই ডেকে নিয়ে এস। অন্তঃপুরের পাহারায় কে কে ছিল?

মন্ত্রী। সীতারাম আর ভাগবত।

প্রতাপাদিত্য। ভাগবত ছিল? সে তো হুঁশিয়ার। সেও কি উদয়ের সঙ্গে যোগ দিলে?

মন্ত্রী। সে হাতপা-বাঁধা পড়ে আছে।

প্রতাপাদিত্য। হাত-পা-বাঁধা আমি বিশ্বাস করি নে। হাত পা ইচ্ছা করে বাঁধিয়েছে। আচ্ছা, সীতারামকে নিয়ে এস। সেই গর্দভের কাছ থেকে কথা বের করা শক্ত হবে না।

মন্ত্রীর প্রস্থান ও সীতারামকে লইয়া পুনঃপ্রবেশ

প্রতাপাদিত্য। অন্তঃপুরের দ্বার খোলা হল কী করে?

সীতারাম। ( করজোড়ে) দোহাই মহারাজ, আমার কোনো দোষ নেই।

প্রতাপাদিত্য। সে-কথা তোকে কে জিজ্ঞাসা করছে?

সীতারাম। আজ্ঞা না, মহারাজ। যুবরাজ— যুবরাজ আমাকে বলপূর্বক বেঁধে অন্তঃপুর হতে বেরিয়েছিলেন।

ব্যস্তভাবে বসন্ত রায়ের প্রবেশ

সীতারাম। যুবরাজকে নিষেধ করলুম তিনি শুনলেন না।

বসন্ত রায়। হাঁ, হাঁ সীতারাম, কী বললি? অধর্ম করিস নে সীতারাম, উদয়াদিত্যের এতে কোনো দোষ নেই।

সীতারাম। আজ্ঞা না, যুবরাজের কোনো দোষ নেই।

প্রতাপাদিত্য। তবে তোর দোষ!

সীতারাম। আজ্ঞা না।

প্রতাপাদিত্য। তবে কার দোষ?

সীতারাম। আজ্ঞা যুবরাজ-

প্রতাপাদিত্য। তাঁর সঙ্গে আর কে ছিল?

সীতারাম। আজ্ঞা বউরানীমা-

প্রতাপাদিত্য। বউরানী!ঐ সেই শ্রীপুরের (বসন্ত রায়ের দিকে চাহিয়া) উদয়াদিত্যের এ অপরাধের মার্জনা নেই।

বসন্ত রায়। বাবা প্রতাপ, উদয়ের এতে কোনো দোষ নেই।

প্রতাপাদিত্য। দোষ নেই? তুমি দোষ নেই বলছ বলেই তাকে বিশেষরূপে শাস্তি দেব। তুমি মাঝে পড়ে মীমাংসা করতে এসেছ কেন? শোনো পিতৃব্যঠাকুর! তুমি যদি দ্বিতীয় বার যশোরে এসে উদয়াদিত্যের সঙ্গে দেখা কর তবে তার প্রাণ বাঁচানো দায় হবে।

বসন্ত রায়। ( কিয়ৎকাল চুপ করিয়া থাকিয়া ধীরে ধীরে উঠিয়া) ভালো প্রতাপ, আজ সন্ধ্যাবেলায় তবে আমি চললেম।

[ প্রস্থান