প্রায়শ্চিত্ত
সে-তলোয়ার খাপ থেকে খোলবার সুযোগ হবে না। প্রজারা শান্তিতে আছে — ভগবান করুন আর লড়াইয়ের দরকার না হয়। বুড়ো হয়েছি তলোয়ার ছেড়েছি, এখন তার বদলে আর-একজন আমার পাণিগ্রহণ করেছে। ( সেতারে ঝংকার)

পাঠান। ( ঘাড় নাড়িয়া) হায় হায়, এমন অস্ত্র কি আছে! একটি বয়েত আছে — তলোয়ারে শত্রুকে জয় করা যায় কিন্তু সংগীতে শত্রুকে মিত্র করা যায়।

বসন্ত রায়। ( উৎ সাহে উঠিয়া দাঁড়াইয়া) কী বললে, খাঁ সাহেব! সংগীতে শত্রুকে মিত্র করা যায়! কী চমৎ কার! তলোয়ার যে এমন ভয়ানক জিনিস, তাতেও শত্রুর শত্রুত্ব নাশ করা যায় না। কেমন করে বলব নাশ করা যায়? রোগীকে বধ করে রোগ আরোগ্য করা সে কেমনতরো আরোগ্য? কিন্তু সংগীত যে এমন মৃদু জিনিস তাতে শত্রু নাশ না করেও শত্রুত্ব নাশ করা যায়। একি সাধারণ কবিত্বের কথা! বাঃ, কী তারিফ! খাঁসাহেব, তোমাকে একবার রায়গড়ে যেতে হচ্ছে। আমি যশোর থেকে ফিরে গিয়েই আমার সাধ্যমতো তোমার কিছু-

পাঠান। আপনার পক্ষে যা ‘ কিছু ' আমার পক্ষে তাই ঢের। হুজুর, আপনার সেতার বাজানো আসে?

বসন্ত রায়। বাজানো আসে কেমন করে বলি? তবে বাজাই বটে।

সেতার বাদন

পাঠান। বাহবা! খাসী!

উদয়াদিত্যের প্রবেশ

উদয়াদিত্য। আঃ, বাঁচলুম! দাদামশায়, পথের ধারে এত রাত্রে কাকে বাজনা শোনাচ্ছ?

বসন্ত রায়। খবর কী দাদা? সব ভালো তো? দিদি ভালো আছে?

উদয়াদিত্য। সমস্তই মঙ্গল।

বসন্ত রায়।

         সেতার লইয়া গান

ভূপালী -যৎ

বঁধুয়া অসময়ে কেন হে প্রকাশ?

সকলি যে স্বপ্ন বলে হতেছে বিশ্বাস।

তুমি গগনেরই তারা

মর্ত্যে এলে পথহারা,

এলে ভুলে অশ্রুজলে আনন্দেরই হাস।

উদয়াদিত্য। দাদামশায়, এ লোকটি কোথা থেকে জুটল?

বসন্ত রায়। খাঁ সাহেব বড়ো ভালো লোক। সমজদার ব্যক্তি। আজ রাত্রে এঁকে নিয়ে বড়ো আনন্দেই কাটানো গেছে।

উদয়াদিত্য। তোমার সঙ্গের লোকজন কোথায়? চটিতে না গিয়ে এই পথের ধারে রাত কাটাচ্ছ যে?

বসন্ত রায়। ভালো কথা মনে করিয়ে দিলে! খাঁ সাহেব, তোমাদের জন্যে আমার ভাবনা হচ্ছে। এখনও তো কেউ ফিরল না। সেই ডাকাতের দল কি তবে-

পাঠান। হুজুর, অভয় দেন তো সত্য কথা বলি। আমরা রাজা প্রতাপাদিত্যের প্রজা, যুবরাজ বাহাদুর আমাদের বেশ চেনেন। মহারাজ আমাকে আর আমার ভাই রহিমকে আদেশ করেন যে, আপনি যখন নিমন্ত্রণ রাখতে যশোরের দিকে আসবেন তখন পথে