কাহিনী

খুঁজিয়া বেড়ায় তোরে। বঞ্চিত যে ছেলে

তারি তরে চিত্ত মোর দীপ্ত দীপ জ্বেলে

আপনারে দগ্ধ করি করিছে আরতি

বিশ্বদেবতার। আমি আজি ভাগ্যবতী,

পেয়েছি তোমার দেখা। যবে মুখে তোর

একটি ফুটে নি বাণী তখন কঠোর

অপরাধ করিয়াছি — বৎস, সেই মুখে

ক্ষমা কর্ কুমাতায়। সেই ক্ষমা বুকে

ভর্ৎসনার চেয়ে তেজে জ্বালুক অনল,

পাপ দগ্ধ ক'রে মোরে করুক নির্মল।

কর্ণ।       মাতঃ, দেহো পদধূলি, দেহো পদধূলি —

লহো অশ্রু মোর।

কুন্তী।                    তোরে লব বক্ষে তুলি

সে সুখ-আশায় পুত্র আসি নাই দ্বারে।

ফিরাতে এসেছি তোরে নিজ অধিকারে।

সূতপুত্র নহ তুমি, রাজার সন্তান —

দূর করি দিয়া বৎস, সর্ব অপমান

এসো চলি যেথা আছে তব পঞ্চ ভ্রাতা।

কর্ণ।       মাতঃ, সূতপুত্র আমি, রাধা মোর মাতা,

তার চেয়ে নাহি মোর অধিক গৌরব।

পাণ্ডব পাণ্ডব থাক্‌, কৌরব কৌরব —

ঈর্ষা নাহি করি কারে।

কুন্তী।                     রাজ্য আপনার

বাহুবলে করি লহো, হে বৎস, উদ্ধার।

দুলাবেন ধবল ব্যজন যুধিষ্ঠির,

ভীম ধরিবেন ছত্র, ধনঞ্জয় বীর

সারথি হবেন রথে, ধৌম্য পুরোহিত

গাহিবেন বেদমন্ত্র — তুমি শত্রুজিৎ

অখণ্ড প্রতাপে রবে বান্ধবের সনে

নিঃসপত্ন রাজ্যমাঝে রত্নসিংহাসনে।

কর্ণ।       সিংহাসন! যে ফিরালো মাতৃস্নেহ পাশ —

তাহারে দিতেছ, মাতঃ, রাজ্যের আশ্বাস।