কাহিনী

একদিন যে সম্পদে করেছ বঞ্চিত

সে আর ফিরায়ে দেওয়া তব সাধ্যাতীত।

মাতা মোর, ভ্রাতা মোর, মোর রাজকুল

এক মুহূর্তেই মাতঃ, করেছ নির্মূল

মোর জন্মক্ষণে। সূতজননীরে ছলি

আজ যদি রাজজননীরে মাতা বলি,

কুরুপতি কাছে বদ্ধ আছি যে বন্ধনে

ছিন্ন ক'রে ধাই যদি রাজসিংহাসনে,

তবে ধিক্‌ মোরে।

কুন্তী।                     বীর তুমি, পুত্র মোর,

ধন্য তুমি। হায় ধর্ম, এ কী সুকঠোর

দণ্ড তব। সেইদিন কে জানিত হায়,

ত্যজিলাম যে শিশুরে ক্ষুদ্র অসহায়

সে কখন বলবীর্য লভি কোথা হতে

ফিরে আসে একদিন অন্ধকার পথে,

আপনার জননীর কোলের সন্তানে

আপন নির্মম হস্তে অস্ত্র আসি হানে।

এ কী অভিশাপ!

কর্ণ।                          মাতঃ, করিয়ো না ভয়।

কহিলাম, পাণ্ডবের হইবে বিজয়।

আজি এই রজনীর তিমিরফলকে

প্রত্যক্ষ করিনু পাঠ নক্ষত্র-আলোকে

ঘোর যুদ্ধ-ফল। এই শান্ত স্তব্ধ ক্ষণে

অনন্ত আকাশ হতে পশিতেছে মনে

জয়হীন চেষ্টার সংগীত, আশাহীন

কর্মের উদ্যম — হেরিতেছি শান্তিময়

শূন্য পরিণাম। যে পক্ষের পরাজয়

সে পক্ষ ত্যজিতে মোরে কোরো না আহ্বান।

জয়ী হোক, রাজা হোক পাণ্ডবসন্তান —

আমি রব নিষ্ফলের, হতাশের দলে।

জন্মরাত্রে ফেলে গেছ মোরে ধরাতলে

নামহীন, গৃহহীন — আজিও তেমনি